বহুল আলোচিত

হারিয়ে যাওয়া যত প্রাণী

এই পৃথিবী এক রহস্যময়। রহস্য তার চারদিকে থাকা প্রাণীজগৎ নিয়েও। এ পৃথিবীতে থাকা নানা প্রজাতির প্রাণীর অধিকাংশই আমাদের অচেনা। অনেক প্রজাতিই ...

Wednesday, May 31, 2017

হারিয়ে যাওয়া যত প্রাণী

এই পৃথিবী এক রহস্যময়। রহস্য তার চারদিকে থাকা প্রাণীজগৎ নিয়েও। এ পৃথিবীতে থাকা নানা প্রজাতির প্রাণীর অধিকাংশই আমাদের অচেনা। অনেক প্রজাতিই আমাদের আবিষ্কারের আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় আট মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। কিন্তু যে হারে বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে, তাতে বিজ্ঞানীদের ধারণা এই যে, প্রায় এক মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী ২০৫০ সালের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যা কিছু করতে হয় করবো - প্রধানমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা জনগণের সেবার জন্যই রাজনীতি করি। কেবল সরকারে নয়, বিরোধীদলে থাকতেও যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। দুর্যোগে মানুষের জীবন রক্ষাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। '

Tuesday, May 30, 2017

লোকশিল্পী মুজিব পরদেশীর বন্ধুর পথচলা



চেনাসুর অডিও কোম্পানির লোগো। ( ছবিসূত্র : YouTube
)
১৯৮৬ সালের কথা। অডিও কোম্পানী “চেনাসুর” এর কর্ণধার,গীতিকার হাসান মতিউর রহমান একটা বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে এক গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। তাঁর এবারের পরিকল্পনাটি গতানুগতিক ধারার বাইরে, একটু ভিন্নই বলা যায়। উনি এমন কাউকে খুঁজছেন, যিনি প্রখ্যাত গজল গায়ক পংকজ উদাসের মতো হারমোনিয়ামের তালে সাবলীলভাবে গাইতে পারেন এবং গলার সুরটাও এমন শ্রুতিমধুর যে, যার গান শুনে শ্রোতারা নিমিষেই কখনোই সুরের মায়াজালে আটকে পড়বেন।

রুপকথার চাঁদ

পৃথিবীর প্রতিটা কোণে প্রতিটা শিশুর অনেক আকাঙ্ক্ষার, অনেক আনন্দের বস্তু এই চাঁদ। শুধু শিশু কেন, রাতের আকাশে উজ্জ্বল রূপালি ওই বিস্ময়কে ঘিরে যুগে যুগে এই পৃথিবীর সকল মানুষের কতো আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা, ভালোবাসা গড়ে উঠেছে, গড়ে উঠেছে কতো গল্প, কথা, রূপকথা। পৃথিবী থেকে আনুমানিক ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা পৃথিবীর এই একমাত্র উপগ্রহ তার নিজের সমস্ত রহস্য নিয়ে সমগ্র পৃথিবীবাসীর জীবনে ও মনে নিজের একটা স্থান নিয়ে থাকেই, তা সচেতন বা অবচেতন, যেভাবেই হোক না কেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই চাঁদটাই কোথাও না কোথাও পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে এক সুতোয় বাঁধতে পারে। সৃষ্টির সেই শুরু থেকে ওই চাঁদের প্রতি মুগ্ধতা থেকে যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো গল্প-কাহিনী-রূপকথার।

Sunday, May 28, 2017

দুনিয়াজুড়ে আলোচিত সব ভাস্কর্য-কাণ্ড

বাংলাদেশে সর্বত্র চলছে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণ সংক্রান্ত আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনে চলছে প্রচুর লেখালেখি। পক্ষে বিপক্ষে আসছে অনেক মতামত। এমনকি পক্ষে বিপক্ষের লোকেরা যার যার মতামত জানাতে নেমে পড়েছেন রাজপথেও। সব মিলিয়ে ভাস্কর্য সংক্রান্ত আলাপ আলোচনায় সরগরম দেশ।
ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্ম নিয়ে এ ধরনের বিতর্ক এবং আলোচনা সমালোচনার ঘটনা আমাদের দেশের মতোই সারা বিশ্বেই হয়ে থাকে। আসুন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে ভাস্কর্য আর শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচিত কিছু ঘটনার দিকে দৃষ্টি ফেরাই।

ফ্রিদা কাহ্‌লো: জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত এক চিত্রশিল্পী

ফ্রিদা কাহ্‌লো
জন্মের পর হয়ত কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের জীবনের লক্ষ্য আমাদের কাছের মানুষদের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ হয়ত নিজেই বেছে নেয় নিজের জীবনের লক্ষ্য, ছোটবেলা থেকেই নিজেকে একটা অবস্থানে চিন্তা করেন। খুবই ভাগ্যবান যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জীবন তাদেরকে এমন এক পরিস্থিতির সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দেয় যে, সেই লক্ষ্য পূরণ আর সম্ভব হয় না। কেউ কেউ  হয়ত ভেঙ্গে পড়েন, কেউ হয়ত ভাগ্যের দোষ দিয়ে বাকী জীবনটা ভাগ্যের কাঠপুতুল হয়েই কাটিয়ে দেন। আবার কেউ সেই ভাগ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে আইকন বানিয়ে তোলে, হয়ে ওঠেন অনন্য। ফ্রিদা কাহ্‌লো হলেন জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত এমনি এক চিত্রশিল্পী।

Saturday, May 20, 2017

আসিমো: বিশ্বের প্রথম অ্যাডভান্সড হিউম্যানয়েড রোবট

‘আসিমো’ হোন্ডা প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিচালিত দুই দশকের চূড়ান্ত গবেষণার একটি পরিণতি। রোবোটিকস প্রযুক্তিতে হোন্ডা কোম্পানির এই অবদান না বললেই নয়। মূলত হোন্ডা মানুষের জন্য এমন একটি রোবট তৈরি করতে চেয়েছিল, যা মানুষের  মাঝে থেকে মানুষের কাজকর্মে সাহায্য করবে এবং মানবশ্রম লাঘব করবে। শুধু তাই না, পাশ্চাত্যের একাকীত্ব দূর করে বিনোদন দিতে পারবে এই ব্যাপারটি নিয়েও তারা চিন্তা করেছিল। এ সকল চিন্তার ফলশ্রুতি হচ্ছে ‘আসিমো’।

আসিমো গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া

আসিমো ২০০০ সালের অক্টোবরে উন্মোচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এর গবেষণা এবং উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে। প্রথমে কিছু এক্সপেরিমেন্টাল ও প্রোটোটাইপ মডেল নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণা করে দেখা হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ পরিবার

মাঝে মাঝে ধনীদের সম্পদের পরিমাণ এত বেশি পরিমাণ হয় যে সেগুলোকে সম্পদের পাহাড় বললেও ভুল ঠেকবে। বলতে হবে সম্পদের পর্বত। এরকম ধনী ব্যক্তি বা ধনীরা যে উপায়েই তাদের সম্পদ উপার্জন করে থাকুক না কেন, তাদের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে সেসব সম্পদ রক্ষা করার জন্য ছিল তাদের যোগ্য উত্তরসূরি। কারণ এক জীবনে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা উপার্জন করে ফেলা অনেক কষ্টকর ব্যাপার। যেসব মানুষের সন্তানেরা যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে পিতার ব্যবসা ধরে রাখতে পেরেছে, পরবর্তীতে তারাই বিশ্বসেরা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সম্পদশালী পরিবারের ইতিহাসের মাধ্যমে সেই সত্যতাই বারবার ফুটে উঠছে। এখানে দশটি বিশ্বসেরা ধনী পরিবার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

হলিউডের কিংবদন্তী পরিচালক জেমস ক্যামেরনের ইতিকথা

হলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালকদের একটি তালিকা করা হলে একদম উপরের দিকে থাকা নামগুলোর মধ্যে জেমস ক্যামেরন যে থাকবেন এটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। তবে বেশীরভাগ মানুষ তাকে শুধু পরিচালক হিসেবে চিনলেও তিনি কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশী কিছু। কানাডিয়ান এই চলচ্চিত্র নির্মাতা একাধারে একজন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার। গভীর সমুদ্র নিয়েও তার অনেক কৌতুহল। নিজের বানানো সাবমেরিন দিয়ে সাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ডুব দিয়ে এসেছেন। তিনি তার চলচ্চিত্রে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করেন সেগুলোকে একেকটা মাইলফলক হিসেবেও ধরা যায়। অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তি তার অ্যাকশনধর্মী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীমূলক চলচ্চিত্রগুলোকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
এখানেই কেটেছে জেমস ক্যামেরনের শৈশব
তার জীবনের গল্পটাও কিন্তু চিত্রনাট্যের মতোই অনেকটা।
জেমস ফ্রান্সিস ক্যামেরনের জন্ম ১৯৫৪ সালে কানাডার অন্টারিওতে।

চেঙ্গিস খানের অমীমাংসিত মৃত্যুরহস্য

১১৬২ খ্রিষ্টাব্দকে পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। কেন? কারণ এ বছরই পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলেন বিখ্যাত মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান, যার বাহিনীর কীর্তিকলাপের কথা শুনলে এখনো নৃশংসতার মাত্রা কল্পনা করে কেঁপে ওঠে অনেকের বুক। বিজীত শহরগুলোর জনগণের উপর মঙ্গোল বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার কাহিনী শুনে আজও নিজের অজান্তেই চোখের পানি বিসর্জন করেন কেউ কেউ, কেউবা দুই-তিন দিন আনমনা হয়ে শুধু ভাবতে থাকেন, “এটাও কি সম্ভব!

Monday, May 15, 2017

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু: নিরহংকারী এক বাঙালী বিজ্ঞানী

আজ সারা বিশ্ব বেতার টেলিগ্রাফের আবিষ্কারক হিসেবে গুলিয়েলমো মার্কোনিকে স্মরণ করে। কিন্তু এক বাঙালী বিজ্ঞানীও যে সেই সময় অনুরূপ গবেষণার জন্য বেতারের আবিষ্কারক হতে পারতেন, কে জানে? আমি বলছি সেই নিরহংকারী বাঙালী বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা যিনি গোটাকয়েক যন্ত্রের আবিষ্কার করলেও পেটেন্টের (Patent*) প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন না।

চেঙ্গিস খানের অমীমাংসিত মৃত্যুরহস্য

১১৬২ খ্রিষ্টাব্দকে পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। কেন? কারণ এ বছরই পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলেন বিখ্যাত মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান, যার বাহিনীর কীর্তিকলাপের কথা শুনলে এখনো নৃশংসতার মাত্রা কল্পনা করে কেঁপে ওঠে অনেকের বুক। বিজীত শহরগুলোর জনগণের উপর মঙ্গোল বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার কাহিনী শুনে আজও নিজের অজান্তেই চোখের পানি বিসর্জন করেন কেউ কেউ, কেউবা দুই-তিন দিন আনমনা হয়ে শুধু ভাবতে থাকেন, “এটাও কি সম্ভব!

Friday, May 12, 2017

পৃথিবীর দুর্ধর্ষ পাঁচ গোয়েন্দা সংস্থার কথা

পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি গোপনীয় কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যেই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাজই হলো নিজ দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা, গবেষণা করা ও সেগুলোকে নিরাপদে রাখা। একে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, গুপ্তচর সংস্থা, সিক্রেট এজেন্সি ইত্যাদি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এদের কাজ কিন্তু মোটামুটিভাবে এক। অর্থাৎ দেশের সুরক্ষার প্রতি নজর রাখা।

ঢাকার পাশেই এখন ছোট কক্সবাজার

আমাদের কম বেশি সবারই মনে একটু হলেও আক্ষেপ আছে- ঢাকায় কেন কোনো পাহাড় নেই? যদি থাকতো, তাহলে কোনো এক মন খারাপ করা বিকেলে পাহাড়ের কাছে সব দুঃখগুলো জমা দিয়ে আসতাম। কেন কোনো সমুদ্র নেই? যদি থাকতো তাহলে রাতের নিঃশব্দতায় সমুদ্রের কাছে চুপি চুপি গিয়ে জেনে আসতাম- কেন রাত হলেই মন কাঁদে?

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ চলচ্চিত্র

প্রতিনিয়ত চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। একেকটি চলচ্চিত্রের পেছনে শত শত মিলিয়ন ডলার খরচও হচ্ছে। এত ব্যয়ের চলচ্চিত্র আবার পুঁজি তুলে কয়েক গুণ লাভও করছে। বাংলাদেশে অবস্থা খারাপ হলেও বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে হলিউড বলিউডে চলচ্চিত্রের বাজার বেশ জমজমাট। একটার পর একটা চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে যাদের খরচ একটার চেয়ে আরেকটার বেশি। ২০০ মিলিয়ন ডলারের কমে একশন, সায়েন্স ফিকশন হয় না বললেই চলে।
যে চলচ্চিত্র আজকে সবচেয়ে বেশি বাজেটের বলে স্থান করে নিয়েছে এক বছর পর সেখানে স্থান করে নিতে পারে অন্য কোনো চলচ্চিত্র। এখন পর্যন্ত (মে ১১, ২০১৭) বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি সিনেমা সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরছি এখানে। আর হিসেবের সুবিধার্থে উল্লেখ রাখছি ১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ ও তার শাস্তি

ধর্ষণ আমাদের সমাজে কোনো নতুন বিষয় নয়, কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে নৈতিক ও মানসিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটছে। বাংলাদেশ বরাবরই বিশ্বের বুকে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ বলে পরিচিত। তবে বর্তমানে আমাদের দেশের মূল্যবোধের যে অবনতি ঘটছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ যে ‘রেপ কান্ট্রি’ নামে পরিচিত হবে না, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।

শুধু ধর্ষণ নয়,

Wednesday, May 10, 2017

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বংশধরের অজানা কাহিনী

বাংলার ইতিহাস পরিবর্তনকারী পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে কম-বেশি ধারণা সবারই আছে। এই যুদ্ধে করুণ পরাজয়ের পরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও তার পরিবারের সদস্যদের করুণ পরিণতিও আমাদের অজানা নয়। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে লিখেছি।

রহস্যঘেরা এরিয়া ৫১ এর ইতিকথা


আজকের লেখার শুরুতেই কয়েকটা নাম বলছি, খেয়াল করে দেখুন কোনোদিন শুনেছেন কিংবা পড়েছেন কিনা- ড্রিমল্যান্ডপ্যারাডাইস র‍্যাঞ্চহোম বেজ এবং ওয়াটারটাউন। কী? শুনেছেন কখনো এ নামগুলো? নাম দেখে অন্তত এটা অনুমান করতে পারার কথা যে, এগুলো কোনো স্থানের নাম, মানুষের নয়। তাহলে এটা কোন জায়গা?
আচ্ছা, আপনি কি ‘এরিয়া ৫১’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জায়গার নাম শুনেছেন? যদি শুনে থাকেন, তাহলে বলবো উপরের উল্লেখ করা সেই চারটি নামও আসলে এই এরিয়া ৫১ এরই অন্য নাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর অত্যন্ত গোপনীয় এ ফ্যাসিলিটির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে। এখানে বর্তমানে ঠিক কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে তা জানার কোনো উপায় নেই। তবে ইতিহাস বলে যে, বিভিন্ন এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন সিস্টেম নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় এ জায়গাটিতে।

শুরু থেকেই গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য চাদরে মোড়ানো বলে এরিয়া ৫১ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে দিনকে দিন। জমাট বাধা এ রহস্য থেকেই কালক্রমে জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু কন্সপিরেসি থিওরি। আমাদের আজকের এ লেখার মূল উদ্দেশ্য সেই কন্সপিরেসি থিওরিগুলোই তুলে ধরা। পাশাপাশি সেই থিওরিগুলো কিভাবে এলো এবং বর্তমানে সেখানে কী চলছে তারও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে আজ।
চলুন তবে দেরি না করে এলিয়েন, ইউএফও, চাঁদে অবতরণ ইত্যাদি নিয়ে কন্সপিরেসি থিওরিগুলোর সাথেই পরিচিত হওয়া যাক আগে।

রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে বানানো হয় এলিয়েন স্পেসক্রাফট

১৯৮৯ সালের কথা। বব লাজার নামের এক দাবী করে বসেন যে, তিনি কিছুদিনের জন্য এরিয়া ৫১ এরই একটি অংশে কাজ করেছিলেন, যার নাম এস-৪। সেই জায়গাটি এতটাই গোপনীয় যে, ঐ প্রজেক্টে তিনি এবং তার অন্যান্য সহকর্মীদের যে বাসে করে নেয়া হয়েছিলো, তার জানালাগুলো বন্ধ ছিলো যাতে করে তারা যাতায়াতের রাস্তা মনে রাখতে না পারেন।

এস-৪ এর বিমান ছাউনিতে লাজার এমন সব ফ্লাইং সসার দেখতে পেয়েছিলেন, যেগুলো কোনোভাবেই পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে না বলে দাবী লাজারের। সেগুলোর শক্তি সরবরাহ করা হচ্ছিলো এন্টিম্যাটার রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে, জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো লালচে-কমলা বর্ণের একটি পদার্থ যার নাম ‘এলিমেন্ট-১১৫’। সসারটি এতটাই শক্তিশালী গ্র্যাভিটি ওয়েভ তৈরি করছিলো যে, সেটার উদ্দেশ্যে কোনো গলফ বল ছুঁড়ে মারলে সেটাও ফিরে আসছিলো!
লাজারের মতে, সামরিক খাতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করছিলো ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট)! দুর্ভাগ্য বলতে হবে লাজারের। একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি লুকিয়ে সেসব সসারের টেস্ট ফ্লাইট দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। এরপরই তার চাকরি চলে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এলিয়েনদের

ইউএফও’র কথা যখন এসেছে, তখন অবধারিতভাবেই আরেকটি যে সত্তার কথা আসে তা হলো এলিয়েন অর্থাৎ ভিনগ্রহের প্রাণী। আর এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের নাকি জেলখানার আসামীর মতোই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এরিয়া-৫১ এ! এমনটাই দাবি করেছেন ঐ ইউএফও তত্ত্বের প্রবক্তা বব লাজার।
একবার যখন তিনি এস-৪ এর একটি হলওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন, তখন পাশের একটি ঘরের ছোট জানালা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দেন তিনি। তখন ঘরের ভেতরে ছোট, ধূসর বর্ণের একটি প্রাণীকে সাদা কোট পরিহিত দুজন মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি! পরে অবশ্য তার পেছনে আসা প্রহরীর ঝাড়ি খেয়ে বেচারা সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।

১৯৯৭ সালে এমন দাবি করেছিলেন ভিক্টর নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি এরিয়া ৫১ এ চাকরি করেন বলে দাবি করেছিলেন। তিনিও এলিয়েনদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারটি দেখেছিলেন বলে জানান। এমনকি তিনি একটি ঝাপসা ভিডিও করেছিলেন যেখানে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হাতে গুলি খাওয়া এক বহির্জাগতিক পাইলটের সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছেন এরিয়া ৫১ এর একজন অফিসার।

এলিয়েনদের ময়নাতদন্ত

এরিয়া ৫১ এর ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা বোধহয় এলিয়েনদের শান্তিতে থাকতে দিতে চান নি। তাই শুরুতে তাদের স্পেসক্রাফট চুরি, এরপর জিজ্ঞাসাবাদের ঝামেলা পোহানোর পর একেবারে তাদের ময়নাতদন্ত করিয়ে ছাড়লেন!
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দিককার কথা। হঠাৎ করে সতের মিনিটের একটি ভিডিও টেপ ছড়িয়ে পড়েছিলো যেখানে দেখা যায় বায়ো-হ্যাজার্ড প্রোটেকশন স্যুট পরিহিত একদল মানুষ ছোটখাট একটি এলিয়েনের দেহ নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে ভিডিওটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে অনেকেই জানান যে, গবেষক দলের অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি নড়াচড়ার ধরনটা ছিলো বেশ আনাড়ি রকমের, যা একে ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত করে!


বছরখানেক পরে ভিডিওটির পরিচালক আরেকটি ডকুমেন্টরি বানান। সেখানে তিনি দাবি করেন যে, তাদের দলটি আসলেই এলিয়েনের ময়নাতদন্ত করেছিলো। তবে মূল ভিডিওর ক্লিপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা নকল আরেকটি ভিডিও বানিয়ে সেটিই বাজারে ছেড়েছিলেন!
Alien from Area 51: The Alien Autopsy Footage Revealed
তবে আপনি যদি এলিয়েনদের ময়নাতদন্ত তত্ত্বে এরপরও বিশ্বাস করতে চান, তাহলে হতাশ হবেন না। কারণ ২০১২ সালে ‘Alien from Area 51: The Alien Autopsy Footage Revealed’ শিরোনামে একটি ডিভিডি বেরিয়েছিলো, যেখানে আবার সতর্কতা হিসেবে লেখা আছে- ‘Graphic Material’! ২০১৪ সালে সর্বশেষ এমন আরেকটি ভিডিও দেখা যায়। সেই ভিডিওতে প্রায় ৪ ফুট লম্বা একটি এলিয়েনের আংশিক কাটা মাথা দেখা গিয়েছিলো।

চাঁদে অবতরণ স্রেফ সাজানো ঘটনা

That’s one small step for man, one giant leap for mankind
চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখার পর মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের এই কথাটি স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবে এরিয়া ৫১ কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতে, অ্যাপোলো-১১ দিয়ে চাঁদে অবতরণের ঘটনাটি স্রেফ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না!
এ ধারণাটির প্রবক্তা কনস্পিরেসি লেখক বিল কেসিং। তার মতে, ষাটের দশকের শেষের দিকে নাসার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার জন্য চাঁদের বুকে অবতরণ করা কোনো মানুষ আর বেঁচে ফিরতে পারবে না! কিন্তু এতদিন ধরে চালানো এই প্রোগ্রামও বাতিল করা সম্ভব ছিলো না। তাই তারা আশ্রয় নেয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা জালিয়াতির!

এজন্য অ্যাপোলো-১১ জনগণের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার পরই গোপন একটি মিলিটারি এয়ারক্রাফটে করে ক্রুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পূর্বপ্রস্তুত একটি মুভি স্টেজে! এর কিছুদিন পরে সেখানেই স্থাপন করা সব ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেন নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। এরপর সেই ভিডিওই বিশ্বজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় নাসার পক্ষ থেকে।
কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের কল্পনার দৌঁড়ের গতি যে এক্ষেত্রে উসাইন বোল্টকেও হার মানিয়েছিলো, তা বোধহয় না বললেও চলে।

মাটির তলায় ৪০ তলা বাঙ্কার

এরিয়া ৫১ এ যে আসলে কী আছে সেই সম্পর্কে জনগণের ধারণা বেশ কম। এই কম ধারণা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছে নানা কল্পনার শাখা-প্রশাখা।
এই যেমন মাটির তলার বাঙ্কারটির কথা বলা যায়। কোনো কোনো কন্সপিরেসি থিওরিস্টের মতে, এরিয়া ৫১ এ মাটির নিচে বিশাল বাঙ্কার গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর সেখানেও রয়েছে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক আশীর্বাদপুষ্ট বিমানের আনাগোনা। সেই বিমানগুলোকে সেখানে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও সেগুলোর কোনো হদিস কেউ না পায়। কারো মতে সেই বাঙ্কারগুলো ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু!

আবারো বব লাজারের শরণাপন্ন হওয়া লাগে বাঙ্কারের কথায়। তার মতে, এলিয়েনদের সেই স্পেসক্রাফটগুলো লুকিয়ে রাখা হয় পাহাড়ের নিচে। সেই বাঙ্কারের প্রবেশপথে রয়েছে বিশাল বড় দরজা যার ডিজাইন আশেপাশের মাটির মতোই করা। ফলে দূর থেকে দেখে একে পাহাড়ের অংশই ভাববে যে কেউ!

মানুষ-এলিয়েন সংকর

এখন যে কন্সপিরেসি থিওরির কথা বলবো, সেটা শুনলে আশ্চর্য হবার পাশাপাশি বেশ মজাও লাগার কথা। কারো কারো মতে, এরিয়া ৫১ এ আসলে একসাথে কাজ করছে আমেরিকান সরকার এবং ভিনগ্রহের প্রাণীরা।
তাদের ধারণানুযায়ী, সেখানে দুই পক্ষের মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ ও এলিয়েনের এমন সংকর প্রজাতি বানাতে কাজ চলছে যাদের দেখলে মনে হবে তারা মানুষ। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা হবে সেই এলিয়েনদের মতোই! তারাই নাকি ভবিষ্যতের পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিবে। অনেকে আবার কল্পনার ডানাকে আরো অনেক দূর প্রসারিত করে বলে যে, এখানে যে সংকর প্রজাতির জন্ম দেয়া হচ্ছে, তারা আসলে এলিয়েন নিয়ন্ত্রিত। ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে, তাহলে এলিয়েনরা গবেষণাগারে জন্মানো এসব সংকর প্রাণীর অঙ্গই ব্যবহার করবে!

আবহাওয়া পরিবর্তনের পরীক্ষানিরীক্ষা


আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মোতাবেক, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মেঘের পরিবর্তন করে বৃষ্টিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলো। আবার ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমানোর জন্য কাজ করেছিলো, যদিও তাদের সেই গবেষণা ততটা ফলপ্রসূ হয় নি।
এ থেকেই অনেকে ধারণা করে থাকে যে, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য এমন বিভিন্ন পরীক্ষাও চলে এরিয়া ৫১ এ।

ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট

‘ম্যাজেস্টিক ১২’ নামে সুপরিচিত একটি টার্ম আছে, যা দিয়ে আমেরিকার একটি গোপন দলকে বোঝায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সেই দলটি নাকি গত ছয় দশক ধরে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা করার জন্য যাতে আমাদের এই ধরণীটি একইসাথে মানুষ এবং অভিজাত এলিয়েনরা পরিচালনা করতে পারবে!
ম্যাজেস্টিক ১২ নাকি ইতোমধ্যেই এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৪৭ সালে সূত্রপাত হওয়া এ প্রজেক্টের মাধ্যমে এলিয়েনদের বিভিন্ন প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এসেছে বলে দাবি কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের। বিনিময়ে এলিয়েনরা পেয়েছিলো বিভিন্ন পশুপাখি, এমনকি মানুষের উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর অধিকার!

সময় পরিভ্রমণ ও টেলিপোর্টেশন

মাঝে মাঝেই আমাদের ইচ্ছা করে অতীতে ফিরে গিয়ে নিজের ছোটবেলার সেই সত্তাটাকে একবার দেখে আসতে, কৈশোরের রঙিন সময়গুলোতে ফিরে যেতে কিংবা জীবনে নেয়া ভুল সিদ্ধান্তগুলো অতীতে গিয়ে কোনোভাবে পাল্টে দিতে। এছাড়াও অতীতের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে সামনাসামনি দেখা করতে কিংবা অতীতের বিখ্যাত কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতেও ইচ্ছা করে কারো কারো। শুধু অতীতের কথাই বা বলছি কেন? বর্তমান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকা মানুষগুলো মাঝে মাঝেই জানতে চায় তাদের ভবিষ্যতে কী আছে তা জানতে। এ সবই সম্ভব হতো যদি সময় পরিভ্রমণ নামক বিষয়টি সম্ভব হতো।
এবার আসা যাক টেলিপোর্টেশনের কথায়। সায়েন্স ফিকশন গল্প ও সিনেমার পাগলেরা এ বিষয়টির সাথে পরিচিত অনেক আগে থেকেই। মুহুর্তের মাঝেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে পারার বিষয়টিকেই সাধারণত বলা হয় টেলিপোর্টেশন। এর মাধ্যমে পদার্থ ও শক্তি উভয়েরই স্থানান্তর সম্ভব বলে মনে করা হয়। মানব কল্পনার এ বিষয় দুটো নিয়ে এরিয়া ৫১ এ কাজ চলছে বলে মনে করেন অনেকে।
এতটুকু পড়ার পর যে কারো মনেই প্রশ্ন জাগবে যে, “এত কনস্পিরেসি থিওরি যে জায়গাটাকে ঘিরে, সেখানে আসলে হয়টা কী? আর এত রহস্য জন্মালোই বা কিভাবে?” এমন প্রশ্ন আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এখন তাহলে এ দুটো প্রশ্নের উত্তরই খোঁজা যাক। শুরু করছি প্রথম প্রশ্নটি দিয়ে।
এজন্য আমাদের চলে যেতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়টাতে। তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের মতিগতি, তারা কী নিয়ে গবেষণা করছে, তারা কোনো আকস্মিক হামলা করে বসবে কিনা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় নিয়ে বেশ উত্তপ্ত ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের মস্তিষ্ক। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে সেগুলো ভূপাতিত হবার আশঙ্কা ছিলো।
অবশেষে ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার এক গোপন প্রোজেক্টের অনুমোদন দেন। সেই প্রোজেক্টের লক্ষ্য ছিলো এমন এয়ারক্রাফট বানানো যেগুলো অনেক উচ্চতা থেকেও শত্রুপক্ষের বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করতে পারবে। এ প্রোগ্রামের ফসল হিসেবেই পরবর্তীতে তারা তৈরি করেছিলো ইউ-২ স্পাই প্লেন।
ইউ-২ স্পাই প্লেন
এ প্লেনগুলোর চালনার প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য দরকার ছিলো লোকালয় থেকে দূরবর্তী গোপন কোনো জায়গা। শেষ পর্যন্ত নেভাডা মরুভূমির দক্ষিণে গ্রুম লেকের কাছাকাছি এলাকায় সন্ধান মেলে পছন্দনীয় সেই জায়গার। এ জায়গাটিই আজ সকলের কাছে এরিয়া ৫১ নামে পরিচিত।
১৯৫৫ সালের জুলাই থেকে ইউ-২ স্পাই প্লেনের টেস্ট ফ্লাইট শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো, এর অল্প কিছুদিনের মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ইউএফও’ দেখার দাবি করতে শুরু করে লোকজন। এর পেছনের কারণটা অবশ্য বেশ মজার।
ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবি করা মানুষগুলোর অধিকাংশই ছিলো কমার্শিয়াল এয়ারলাইনের পাইলট। তৎকালে এরোপ্লেনগুলো সাধারণত ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়তো। মিলিটারি এরোপ্লেনগুলো উড়তো আরো উঁচু দিয়ে, প্রায় ৪০,০০০ ফুট। অনেকেই ধারণা করতো যে, ‘মানুষের তৈরি’ কোনো এরোপ্লেন এর বেশি উঁচু দিয়ে উড়তে পারবে না! আর ঠিক এ জায়গাতেই লেগে গেলো যত গোলমাল। কারণ ইউ-২ প্লেনটি উড়ে যেত ৬০,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতা দিয়ে!
ব্যাস, এখানেই মানুষের মনে ঢুকে গেলো অবিশ্বাস। “এটা মানুষের বানানো হতেই পারে না। এটা অবশ্যই এলিয়েনদের বানানো কোনো ইউএফও!
বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য জানতেন যে, ইউএফও দাবি করা জিনিসগুলো আসলে তাদের গোপন প্রোজেক্টের ইউ-২ স্পাই প্লেন। কিন্তু এ সত্যটি জনসম্মুখে বলা বারণ ছিলো তাদের জন্য। কারণ এটি ছিলো একটি টপ সিক্রেট প্রোজেক্ট। ফলে লোকমুখে ছড়াতেই থাকে ইউএফও দেখতে পাওয়ার সেসব ভিত্তিহীন দাবি।
A-12
Bird of Prey
F-117
Tacit Blue
পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ইউ-২ এর অপারেশন স্থগিত করা হলেও এরিয়া-৫১ এ চলতে থাকে অন্যান্য আরো স্টেলথ এয়ারক্রাফট নিয়ে গবেষণা। এগুলোর মাঝে ছিলো A-12, Bird of Prey, F-117A এবং Tacit Blue। ফলে গুজবের ডালপালার বিস্তৃতি কখনোই থেমে থাকে নি। এরপরই আসে ১৯৮৯ সালে বব লাজারের সেই বিষ্ফোরক মন্তব্য যা সেখানে কাজ করা ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই ভালভাবে নেন নি। তখন সেখানকার বিজ্ঞানীদের মানসিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে এরিয়া ৫১ নিয়ে গবেষণা করা এরোস্পেস ইতিহাসবিদ ও লেখক পিটার মার্লিন বলতে বাধ্য হন, “Some are even mad because they worked on these things and built these amazing planes. This is Earth technology. You got folks claiming it’s extraterrestrial when it’s really good old American know-how.
এখন তাহলে প্রথম প্রশ্নের উত্তটা খোঁজার মধ্য দিয়ে আজকের দীর্ঘ এ লেখাটির ইতি টানা যাক। এরিয়া ৫১ এখনো বহাল তবিয়তেই চলছে। এখন এর সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। তবে ভেতরে যে ঠিক কী নিয়ে কাজ চলছে তা নিয়ে বাইরের জগতে বসে অনুমান করা খুব কঠিন। আর অনুমান করলেও সেটা সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের কোনো উপায়ও নেই।

পিটার মার্লিনের মতে এরিয়া ৫১ এ বর্তমানে উন্নততর স্টেলথ টেকনোলজি, অ্যাডভান্সড ওয়েপন, ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার এবং ইউএভি (আনম্যান্‌ড এরিয়াল ভেহিক্‌ল) নিয়ে কাজ হচ্ছে। ওদিকে ইউ-২ বিষয়ক ইতিহাসবিদ ক্রিস পোককের মতে এখন সেখানে বিশেষ ধরনের এয়ারক্রাফট, রেডিও কমিউনিকেশনের অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তি, ডিরেক্টেড এনার্জি ওয়েপন এবং লেজার নিয়ে গবেষণা চলছে।
কী মনে হয় আপনার? কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতো আপনিও কি মনে করেন ইউএফও, এলিয়েন, ওয়ান-ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট নিয়ে কাজ চলছে এরিয়া ৫১ এ? নাকি মার্লিন, পোককের মতো ইতিহাসবিদদের কথাই সঠিক যা বানচাল করে দেয় অনেকের স্বপ্নের ইউএফও আর এলিয়েনদের? সঠিক উত্তরটা কি আদৌ পাওয়া সম্ভব?
তথ্যসূত্র
১) popularmechanics.com/military/research/a24152/area-51-history/
২) nsarchive.gwu.edu/NSAEBB/NSAEBB443/
৩) people.howstuffworks.com/10-area-51-conspiracies.htm
৪) news.nationalgeographic.com/news/2011/05/pictures/110520-spy-plane-area-51-cover-up-crash-cia-conspiracy/
৫) en.wikipedia.org/wiki/Area_51#UFO_and_other_conspiracy_theories

Monday, May 8, 2017

তাস খেলার ইতিহাস: কীভাবে এলো হার্টস, ডায়মন্ড, স্পেইড আর ক্লাবস?

‘তাস’ শব্দটি শুনলেই কেন জানি হাতটা করে নিশপিশ আর মনটা হয় আনচান। এই অনুভূতি আমাদের অনেকেরই অনেকবার হয়েছে, যারা কখনো তাস খেলিনি, তাদেরও! তবে যারা এই খেলার সাথে মোটামুটিভাবে পরিচিত তাদের কাছে শব্দটির তাৎপর্য অন্য মাত্রার। ব্রিজ, ব্রে, টোয়েন্টি নাইন খেলতে না জানলেও রংমিলান্তি খেলতে পারে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন তো আবার কম্পিউটারের সামনে বসলেই নেটবিহীন অবস্থায় কেউ সলিটেয়ার খুলে যখন তখন ঝালিয়ে নেয়া যায় তাস খেলা! মোবাইলেও আছে তাসের খেলার হরেক বাহার। শুধু কি আর খেলা? আছে তাস নিয়ে হরেক রকমের বাহারি জাদু। স্ট্রিট ম্যাজিকের অধিকাংশও তো তাস নিয়েই।
চিত্রঃ কার্ড নিয়ে স্ট্রিট শো
খেলার উপকরণের প্রাচুর্য না থাকার কারণেই বোধহয় এই খেলার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। কীইবা লাগে? হাতের কাছে এক প্যাকেট তাস থাকলেই তো হলো। রং-বেরঙের বাহারি বায়ান্নটি তাসের মধ্যে লুকিয়ে আছে যেন চমৎকার কিছু সময় কাটানোর ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে তাই খুব জানতে ইচ্ছে হয়, কী করে এলো এই খেলা? কী করে এলো এই ‘রাজা’,‘রানী’ আর ‘উজির’ বা ‘গোলামে’র  ধারণা?
চিত্রঃ স্পেডের কয়েকটি তাস
তাস খেলার আবিষ্কারের দিকে নজর দিলে দেখা যায় প্রায় ছয়শত বছরেরও আগে পঞ্চদশ শতকে তাস খেলার উদ্ভাবন ঘটে। চীনে প্রথম এই খেলার প্রচলন শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। খ্রিস্টীয় নবম শতকের দিকে ‘শাং’ রাজবংশের প্রথম রাজা ‘টাং’ রাজার রাজত্বকালে অন্তঃপুরবাসী নারীরা তাস খেলে সময় কাটাতেন। তখন খেলার কার্ড হিসেবে পয়সা ও প্লেট ব্যবহার করা হতো।
চিত্রঃ চীন দেশের তাস
চীন থেকে তখন অনেকেই গাধা কিংবা হাতির পিঠে করে মালামাল বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত। বাণিজ্যিক কারণে যারা চীনে আসতো তাদের মাধ্যমে তাস খেলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মিশরের ‘মামলুক’ শাসকরা এ খেলার নাম দিয়েছিল ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে মামলুকরা প্রথম বায়ান্ন তাস দিয়ে এ খেলার প্রচলন করেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তাদের তাসের প্রতীকগুলো ছিল ভিন্ন ধরনের। তারা এক থেকে দশ নং কার্ডকে কোর্ট কার্ড হিসেবে ধরে ‘কিং’ ‘কুইন’ এবং ‘ভিজির’ চিহ্নিত কার্ড রাখত। ভিজির রুশ শব্দ যার অর্থ হল উজির। মামলুক সম্রাটের কোনো এক উজিরের নাম ছিল নাইয়িব। তিনি এ খেলার অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে মিশরে ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ নামে এই খেলার প্রসার ঘটেছিল।
চিত্রঃ প্রাচীন একটি তাস
পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের দেশগুলোতে তাস খেলা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর সাথে সাথে শুরু হয় তাস নিয়ে জুয়া খেলার প্রচলন। এই জুয়া হয়ে ওঠে তখনকার সমাজে বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। এরূপ জুয়া খেলার প্রসারের কারণে ইউরোপীয় সংস্কৃতি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তখন ইউরোপীয় শাসকরা আইন করে তাস খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু ইউরোপীয় শাসকদের নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি সেই সময়। সাউথ আফ্রিকার ‘জোহানবার্গে’র প্রিন্টিং মেশিন আবিষ্কারের ফলে বিপুল পরিমাণে তাস ছাপা হয়। সেসব তাস ইউরোপীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে খেলাটিকে আরো জনপ্রিয় করে তোলা হয়। তাই শেষ পর্যন্ত তাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর ধোপে টেকেনি। ফলশ্রুতিতে ‘গ্যাম্বলিং’ বা ‘জুয়া’ খেলা অলিখিতভাবে এক ধরনের  স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
চিত্রঃ জুয়া খেলায় তাস
ক্রমবর্ধমান সময়ের সাথে সাথে তাসের ইতিহাসের বিবর্তন ঘটতে থাকে। বিভিন্ন দেশে এই খেলার প্রচলন এবং প্রসার ঘটে সমাজ ও সংস্কৃতির ভিন্নতার আঙ্গিকে। ইতালি, স্পেন, জার্মান এবং ফ্রান্স তাস বিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে যোগ্য দাবিদার। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ছবি বা প্রতীকের ভিন্নতা বহুলাংশে দৃশ্যমান। বর্তমানে আমরা যে তাস ব্যবহার করছি তা ফ্রান্সের তাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ইংরেজিতে প্রতীকগুলোর নাম হল হার্টস, ডায়মন্ড, স্পেইড আর ক্লাবস। বাংলাতে নামগুলোর পরিবর্তিত রূপ হল হরতন, রুইতন,  ইশকাপন এবং চিরতন
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রতীকের তাস
ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এই খেলা রাজপরিবার এবং সৈন্য-সামন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে জার্মানির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কার্ডের নামেও আসে পরিবর্তন। প্রথম দিকে তাসের প্যাকেটে ৭৮টি তাস থাকত। কিন্তু এতগুলো তাস নিয়ে খেলা জটিল ও কষ্টকর হয়ে ওঠায় তাসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়।

এবার আসা যাক তাসে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতীকের উৎপত্তির ব্যাপারে। তাসের চারটি প্রতীক পঞ্চদশ শতকের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পরিচয় বহন করে । আবার তাসের ছবিগুলোতে উপস্থাপিত হয়েছে ঐতিহাসিক নানা ব্যক্তিত্বের। প্রথমেই ধরা যাক ডায়মন্ডসের কথা। এটি মূলত ধনী শ্রেণীর প্রতীক। তখনকার সময়ে এরা ছিলো শাসক শ্রেণী। ডায়মন্ডস দিয়ে তাদের ধনদৌলত আর ঐশ্বর্যকে বোঝানো হতো। স্পেডস দিয়ে বোঝানো হতো সৈন্যের প্রতীক। স্পেড শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ‘স্পাডা’ থেকে যার অর্থ তরবারি। হার্টস প্রতীকটির আকার ছিল পান পাতার মতো। পরে ওটা হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের আকার পায়। এটা মূলত তখনকার সময়ের পাদ্রীদের প্রতীক। পাদ্রীদের মন পবিত্র ধরে নিয়ে এই প্রতীকের আবির্ভাব। সর্বশেষে ‘ক্লাবস’ যা দ্বারা বোঝানো হতো গরিব মানুষদের। ইংরেজি ক্লাবসের বাংলা হলো ‘মুগুর’। “গরিব শ্রেণীর মানুষের মুগুরই সম্বল” এরকম একটা অর্থ বহন করে এই তাসটি।

বিভিন্ন প্রতীকের তাসের গায়ে আছে আবার রাজা, রানী এবং উজিরের ছবি। এদেরও রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রতিফলন। এবার দেখব সেইসব চরিত্র যার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই বহুল পরিচিত ছবিগুলো-

ইশকাপন বা স্পেড

রাজা ডেভিডকে কিং অফ স্পেডস বলা হয় যিনি ছিলেন দৈত্যাকৃতি ফিলিস্তাইন যোদ্ধা গোলিয়াথের হত্যাকারী। বাইবেল অনুযায়ী ডেভিড ছিলেন যিশু খ্রিস্টের পূর্বপুরুষ।  এই বিখ্যাত রাজা কখনোই কোনো আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না। তিনি সব সময় বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতেন। এই তাসের রানী হলেন গ্রিক যুদ্ধ দেবী প্যালাস, যিনি দুই হাতে ধরে আছেন তরবারি ও ফুল। জ্যাকের ছবিটি ফ্রান্সের একটি জনপ্রিয় কাব্যিক চরিত্র।

হার্টস বা হরতন

৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন বা চার্লস ইউরোপের প্রায় অর্ধেকের মতো জয় করে ফেলেন। তাসে এই রাজাকে দেখা যায় তলোয়ার নিজের মাথায় ঠেকিয়ে নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছেন। তাই অনেকে এই রাজাকে আত্মঘাতী রাজাও বলে থাকেন। আরও একটি মজার বিষয় হল তাসের রাজাদের মধ্যে একমাত্র হার্টসের রাজারই কোন গোঁফ নেই। হার্টসের জ্যাক হলো লা হিরে যিনি ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন।

ডায়মন্ডস বা রুইতন

রাজা জুলিয়াস সিজারের নাম কে না শুনেছে? রোম সাম্রাজ্যের উত্থানে এই প্রভাবশালী শাসকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিং অব ডায়মন্ডস হলেন মূলত রোমের এই বিখ্যাত শাসক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক। তিনি খুবই দক্ষতার সাথে রোমের রাজনীতি দীর্ঘসময় ধরে নিয়ন্ত্রণ করে গেছেন। আরো একটি মজার বিষয় হলো, তাসের রাজাদের মধ্যে সব রাজারই মুখ স্পষ্ট দেখা গেলেও একমাত্র রুইতনের রাজারই মুখ অর্ধেক দেখা যায়। কুইন অব ডায়মন্ডস হলেন তারই স্ত্রী রাচেল। গ্রীক এবং রোমান পুরাণ অনুযায়ী “ট্রয়ের” বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন হেক্টর আর তাকে স্মরণ করেই ডায়মন্ডসের জ্যাক।

ক্লাবস বা চিরতন

গ্রিসের মেসিডোনিয়ার সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বের দিকে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই দখল করে বসেন। আর কিং অব ক্লাবসের কিং হলেন এই দিগ্বিজয়ী রাজা। কুইন অব ক্লাবস হলেন একমাত্র ইংরেজ মহিলা যিনি আর কেউ নন ব্রিটিশ রানী প্রথম এলিজাবেথ। তার গোলাম হলেন রাউন্ড টেবিলের বিখ্যাত নাইট, স্যার ল্যান্স লট।
চিত্রঃ পূর্বে ব্যবহৃত তাসের বিভিন্ন প্রতীক
তাস নিয়ে খেলার সময় হয়তো এতো ধরনের কথা আমাদের মাথায় খেলে না। তাসেরও যে রয়েছে ইতিহাস সে সম্পর্কে জানা বা অজানা যাই হোক না কেন তাস খেলায় তেমন প্রভাব পড়ে বলে মনে হয় না। তা সত্ত্বেও এর কিছুটা যদি জানা থাকে সেটা বিশেষ মন্দ নয়, খেলতে খেলতে নাহয় এবার তাসের আড্ডা ভরে উঠুক ইতিহাসে!
তথ্যসূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Playing_card
২। https://bn.wikipedia.org/wiki/তাস
৩। http://houseofplayingcards.com/playing-card-history
৪। http://archive.samakal.net/তাসের ইতিহাস
৫। http://www.famousnews24.com/others/articles/তাসের চার রাজার কাহিনী

আধুনিক দাসপ্রথা এবং দুঃস্বপ্নের দুবাই

ফসফরাস মেশানো হালকা নীলাভ ঢেউ পায়ে স্পর্শ করতে শিউরে উঠলেন শেখ মোহাম্মাদ। ফিরে তাকালেন দুবাই শহরের দিকে, পারস্য উপসাগরের তীর ঘেঁষে এই বিশাল শহর গড়ে তুলতে তার কম কষ্ট করতে হয়নি। অবশ্য তার আবার কি কষ্ট? মানুষের তৈরি সর্বোচ্চ চূড়া আকাশছোঁয়া স্কাইস্ক্র্যাপার “বুর্জ খলিফা”-র স্টিল বীমগুলো তো তিনি আর নিজ হাতে বাঁকাননি। সিদ্ধান্ত নিলেন দুবাই শহর একটু ঘুরে দেখবেন।
বুর্জ খলিফা (আরবি – برج خليفة‎‎, বুরুজ খলিফা )
সাগরের উপরে কৃত্তিম মাটি-বালুর উপর গড়ে তোলা পাম আইল্যান্ড আর দ্য ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড দেখলেন, একইভাবে সাগরের উপরেই বানানো পেট বাঁকানো সেভেনস্টার হোটেল “বুর্জ আল আরব”-টাও চোখে পড়ার মতো জায়গায় রয়েছে। দুবাই মেরিনা আর শেখ জায়েদ রোডের স্কাইস্ক্র্যাপারগুলো তো যেকোনো মানুষের কাছেই স্বপ্ন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল নিজেরই হাসিমুখের ছবি, তবে সেগুলোও চাপা পড়েছে রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড আর কর্নেল স্যান্ডার্সের ম্যাকডোনাল্ডস আর কেএফসির বিশাল বিশাল সাইনবোর্ডের নিচে। পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে বিকিয়ে দেওয়া পুরো দুবাই শহর জ্বলজ্বল করছে আরব্য রজনীর সহস্র এক বাতির আলোকছটায়।
বুর্জ আল আরব
তবে ধীরে ধীরে দুবাইয়ের আমিরের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। কারণ আর কিছুই নয়, এত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন দিরহাম খরচ করেও গ্লোবাল সিটির কাতারে দুবাইকে নিয়ে আসতে পারছেন না। জাঁকজমকপূর্ণ এই বিশাল নকল শহর তো সবার জন্য নয়, পশ্চিমা বিশ্বের ধনকুবেরদের হাসির আড়ালে কত কান্না চাপা পড়ে আছে তা সবার কাছে একটু একটু করে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। তো সেই কান্নাভেজা মুখগুলোর গল্পগুলোই শোনা যাক।
ওহহো, শুরু করার আগে একটু দুবাইয়ের ইতিহাস শুনে আসি। আজ থেকে ৪০ বছর আগেও ক্যাকটাস আর কাঁকড়াবিছেদের সম্পত্তি থাকা দুবাইয়ের সূচনা হয়েছিল আঠার শতকের শুরুর দিকে। ভারত, পারস্য আর ধুলো উড়ানো আরব অঞ্চল থেকে লোকজন এসেছিল নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর আশায়, যদি উপসাগরের তলা কুড়িয়ে দু-তিনটে দুষ্প্রাপ্য মুক্তার হদিস পাওয়া যায়। স্থানীয় পঙ্গপাল “দাবা”-র নাম থেকে থেকে লোকজনের মুখে ঘুরতে ঘুরতে দুবাইয়ে পরিণত হওয়া জেলেদের আস্তানার আয়ু ফুরিয়ে যায় ১৯৩০ এর দশকেই, জাপানে ততদিনে কৃত্তিম মুক্তা বানানোর ধুম পড়ে গেছে। ব্রিটিশরা তেলের গন্ধ পেলেও ভান্ডারে টান পড়ে যাওয়ায় ১৯৭১ সালে জলদস্যুদের হাত থেকে দুবাইয়ের জেলেদের সুরক্ষা দেওয়ার নামে থেকে যাওয়া সৈন্যদের সরিয়ে নেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় দুবাইয়ের আধুনিকায়ন, তেলের খনি আবিষ্কার হওয়ার দুই বছরের মাথায় জনসংখ্যা বেড়ে যায় চার গুণ। এদের বেশিরভাগই হলো তেলের খনিতে কাজ করে টাকার সমুদ্রে ভেসে যাওয়ার আকাশ-পাতাল স্বপ্নে বিভোর ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন।
১৯৬৩ সালের দুবাই বন্দর
দুবাইয়ের অশিক্ষিত শেখ যারা সারা জীবন উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি চষে বেড়িয়েছে তাদের হাতে যদি হঠাৎ করে আলাদীনের প্রদীপ ধরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা কী করতে পারে? মরুভূমির মধ্যে ফুলের চাষ করার স্বপ্ন এখন আর অসম্ভব কিছু নয়, তাই শেখ মাখতুমও চাষ শুরু করলেন। তবে তা ফুলের নয়, বড় বড় স্কাইস্ক্র্যাপারের যা দিয়ে দুবাইকে বানানো হবে আরব্য রজনীর আলো ঝলমলে প্রাসাদে, একই সাথে বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু এবং ধনকুবের ব্যবসায়ীদের ছুটি কাটানোর জায়গা। এই মুহূর্তেও মরুভূমির বালু উঠিয়ে বানানো বিখ্যাত “ক্যানাল অব দুবাই”-এ নৌকাভ্রমণে যাওয়ার সময় পশ্চিমা টুরিস্টদের কানে বাজছে গাইডের গলা ফাটানো চিৎকার, “এই বিশাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বানিয়েছেন আমাদের আমির…”। ডাহা মিথ্যা কথা, এই বিশাল শহরের একটি ইটও আমির বানায়নি, বানিয়েছে আমিরের অধীনে থাকা হাজার হাজার দাসেরা। তাদের একজনের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক আরব্য রজনীর প্রথম দুঃস্বপ্নের রাত।
মৎস্যশিকারিদের প্রাচীন দুবাই

আধুনিক দাসপ্রথা                                                              

দুবাইয়ের ঝলসে যাওয়া রোদের দিকে চোখ তুলে তাকানোই নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমান। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তীব্র গরমে হোটেলের সুইমিং পুল বা এসির নিচে বসে থাকার পরামর্শ আর কারও কাছে না হোক অন্তত স্থানীয় আমিরাতের লোকজনের কাছেই পাবেন। তাই ৫ মিনিটের মধ্যেই হিট স্ট্রোক হওয়ার ভয়ে বেশিরভাগ টুরিস্টরাই সন্ধ্যার পর হোটেল ছেড়ে বের হন। সন্ধ্যার দিকে “এই শহর আমির বানিয়েছেন…” চিৎকারের চোটে আপনার মনে যদি সন্দেহও জাগে আপনি আশেপাশে তাকিয়েও ভারতীয় চেহারার কোনো শ্রমিককে দেখতে পাবেন না। তবে সূর্য লাল হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও যদি আপনি দুবাইয়ের উত্তর দিকের ধুলোওড়া রাস্তার দিকে তাকান, ছোটছোট ধাতুর তৈরি চকচকে বাসগুলো চোখেও পড়তে পারে। বাসগুলো যাচ্ছে সোনাপুরের লেবার ক্যাম্পে, তিন লক্ষ শ্রমিকের আবাসস্থলে। দুবাইয়ের কাঁচ ঝলমলে অট্টালিকাগুলো থেকে বেশ খানিকটা দূরে এই সোনার শহর!
কাজ শেষ করে “সোনাপুর লেবার ক্যাম্প”-এ ফিরছেন শ্রমিকরা
শাহিন আল মনির, বাংলাদেশের ২৪ বছর বয়সী এক ভবন শ্রমিক। চার বছর আগে তার কাছে এক দালাল গিয়েছিলেন দুবাইয়ে আসার প্রস্তাব নিয়ে, “প্রতিমাসে চল্লিশ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ করে দিচ্ছি আপনাকে, মাত্র সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। ভালো খাবার, ভালো থাকার জায়গা আর ভালো সুযোগ-সুবিধাও, একেবারে স্বপ্নের শহর। আপনাকে আপাতত মাত্র দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিলেই চলবে, ওয়ার্ক ভিসা তৈরির জন্য এই টাকাটা লাগবে। মাত্র ছয় মাসেই টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন।” শাহিন আল মনির প্রস্তাবে রাজিও হয়ে গেলেন। নিজের জায়গা-জমি বিক্রি করে, মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পাড়ি জমালেন স্বর্গের শহরের উদ্দেশ্যে।
দুবাইয়ের লম্বা এয়ারপোর্টে পা রাখতেই স্বর্গের আসল চেহারা প্রকাশ পেল, কেড়ে নেওয়া হলো মনিরের সবুজ পাসপোর্ট। টাকার অঙ্কটা ৪০ হাজার থেকে নেমে হয়ে গেল ৯ হাজার, আর কাজের সময়ের ঘন্টা বেড়ে ১৪ ঘন্টা। আবার শোনা যাক, মাত্র ৯ হাজার টাকা ১৪ ঘন্টা কাজের জন্য! তাও ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, সাথে ধূলিঝড় হাবুবের বাদামী আতঙ্ক তো রয়েছেই। “পছন্দ হয়নি? ফিরে যাও।” কিন্তু মনিরের মতো দুবাইয়ের ৭.৫% বাংলাদেশী ফিরে যাবেই বা কীভাবে? পাসপোর্ট তো পড়ে রয়েছে কোম্পানির লকার রুমের কোন কোণায়। আর ৯ হাজার টাকা দিয়ে “ফ্লাই এমিরেটস”-এর ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেনাও আকাশে বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখার মতো।
মনিরের আর কিই বা করার আছে? তার পরিবারের লোকেরা ভাবছে বিদেশের কোন স্বর্গে তার ছেলে রয়েছে, আর এদিকে মনির দুই বছর বেগার খেটে মরছে তার খরচ পরিশোধের জন্য। তাও টাকার অঙ্কটা বাংলাদেশে সে যা আয় করত তার চেয়েও কম।
সোনাপুরের লেবার ক্যাম্পের দিকে এবার একটু চোখ ফেরানো যাক। অন্ধকার, ছোট্ট এক গুহার মতো রুমে চারটি ট্রিপল-ডেকার বাঙ্কারে মনিরের সহযোগী আরও ১১ জন শ্রমিক। তীব্র গরমে অজ্ঞান হয়ে যদি এসির সুখস্বপ্ন দেখা যায় তবুও ভাল, কারণ ফিলিপ ডিয়েলের আবিষ্কার করা ইলেকট্রিক ফ্যানের গরম বাতাসও মনিরের মতো লাখো শ্রমিকের জন্য পরম আরাধনার বস্তু! এমনকি ভেন্টিলেটরের মৃদু বাতাসও যেন গায়ে না লাগে সেজন্য ভেন্টিলেটরও বানানো হয়নি! প্রাচীনকালের রোমান-গ্রিকরাও বোধহয় এরচেয়েও হাজার গুণ ভাল ছিল।
শ্রমিকদের থাকার জায়গা
গরমে পানির তেষ্টায় মরে যাচ্ছেন? বিশাল বিশাল সাদা রঙের কন্টেইনার একেবারে চোখের সামনেই রয়েছে। ট্যাপ খুলে আঁজলা ভরে পানি মুখে নিতেই বিতৃষ্ণায় মুখ থেকে পানি ফেলে দিতে হবে, পারস্য উপসাগরের টলটলে নীল পানিতে লবণের মাত্রাটা খুব একটা কমেনি যে! কিন্তু কি আর করার, বেঁচে থাকতে হলে সাগরের পানি খেয়েই জীবন বাঁচাতে হবে।
চোদ্দ ঘন্টা কাজের একটু বিবরণ দেওয়া যাক। শাহিন আল মনির বাস্তবেই আকাশে বাড়ি বানাচ্ছেন। হেঁটে বেড়াচ্ছেন ৬৭ তলা উপরে, কিন্তু কাজটা কী? প্রতি দফায় ৫০ কেজি করে ইট-সিমেন্ট আনা-নেওয়া, যা করতে হলে স্বয়ং হারকিউলিসও হাল ছেড়ে দিত!
দুবাই শহরের কারিগরেরা
কাজ করবেন না? রাগ দেখাবেন? অট্টালিকা থেকে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিবেন? কয়েকদিন আগেও কিছু শ্রমিক চার মাসের প্রাপ্য বেতন না দেওয়ায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। দুইদিন পরেই তাদের আবারও দেখা গেল আকাশে টাওয়ার বানাতে, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে ফেলে ওয়াটার ক্যাননের নিরবিচ্ছিন্ন জলপ্রবাহ আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়? পদ্মা-যমুনার ঠান্ডা পানি থেকে দুবাইয়ের ফুটন্ত কড়াইয়ে পা দেওয়া এসব শ্রমিক তাই বিল্ডিং-এর রেলিং থেকে আসফাল্ট দিয়ে মোড়ানো ধূসর রাস্তায় লাফ দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তারপর নামের পাশে লাল কালি দিয়ে লিখে রাখা হয়, “ডেথ বাই অ্যাকসিডেন্ট”! ২০০৫ সালে ভারতের এমব্যাসি এক বছরে ৯৭৮ জন আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ করার পর দুবাই কর্তৃপক্ষ তাদের গোণার আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেন, মানে গোণার সুযোগটুকুও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লাফ দেওয়ার আগেও যদি জীবনের শেষ হাসিটা হেসে যান, তবে করুণা ছাড়া আর কিছুই দেখানোর বাকি নেই। বুর্জ খলিফার চূড়া ছাড়িয়ে আরও উপরে উঠে যাওয়া ব্যক্তিটির রেখে যাওয়া ঋণগুলো তখন চেপে বসবে হাজার মাইল দূরে থাকা তার বুড়ো বাবা-মা, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কিংবা স্ত্রীর ঘাড়ে! পরিশোধ না করলে শ্রীঘরের বাতাসটা তো রয়েছেই, তবে সেগুলোও দুবাইয়ের তুলনায় রীতিমত স্বর্গ।
গোধূলির সোনালী আলোয় দেখা যাবে শাহিন আল মনিরের মত শ্রমিকরা গলায় স্পিরিট ঢালছেন আর নিশ্চল অসাড় অবস্থায় শুয়ে শুয়ে দেখছেন নিজ হাতে গড়া জ্বলজ্বলে দুবাইয়ের আলো।

গৃহকর্মী নাকি কৃতদাসিনী?

আপনি যদি ঘরের কাজকর্মের জন্য একজন গৃহকর্মী নিয়োগ করতে চান, তবে খুঁজবেন সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দেওয়া ব্যক্তিকেই। আর দুবাইয়ের মতো “আন্তর্জাতিক শহর”-এ মানুষের মর্যাদা নির্ভর করবে তার গায়ের রঙ-এর উপরে। এখানে একজন ইউরোপিয়ানকে যে টাকা দেওয়া হয়, একজন ফিলিপিনোকে সেই একই কাজের জন্য দেওয়া হবে তার চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তবুও, ফিলিপিনোরা তাদের গায়ের চামড়ার কারণে গৃহকর্মী হিসেবে একটু বেশিই দামী। তবে? ভারতীয়দের চেয়েও গায়ের চামড়া কালো এরকম কাউকে খুঁজে বের করাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী, আর একারণে দুবাইবাসীর নতুন আকর্ষণ আফ্রিকান নারীরা।
“দ্য মেট্রোপোলিস অব দুবাই”-এর এক কোণায় চোখে পড়বে মহিলা হোস্টেল; মহিলা হোস্টেল বললে ভুল হবে, পালানো গৃহকর্মীদের থাকার জায়গা। সেখানেই চোখে পড়বে মেলা মাতারির মতো হাজারো আফ্রিকান-ভারতীয় নারী। মেলা মাতারি, ২৫ বছর বয়সী এই ইথিওপিয়ান নারীর গন্তব্য কীভাবে দুবাই হলো সেই গল্পটাই শোনা যাক। শুরু করা যাক আরব্য রজনীর দ্বিতীয় দুঃস্বপ্নের রাত।
লোহিত সাগরের ওপাশের বালির সমুদ্রের ভেতর গড়ে ওঠা স্বর্গের কথা শুনেছিলেন এক এজেন্সির কাছে, সেই এজেন্সিই দুবাইয়ে আসার সব ব্যবস্থা করে দেয়। চার বছরের মেয়েকে ছেড়ে উন্নত জীবনযাপনের আশায় দুবাইয়ে নামার পর বেতনের অঙ্ক নেমে আসে অর্ধেকে! মেলাকে চাকরি দেওয়া হয় এক অস্ট্রেলীয় পরিবারের কাছে। চার সন্তানের জননী সেই অস্ট্রেলীয় গৃহকর্ত্রী মেলাকে দিয়ে কাজ করাতে থাকেন ভোর ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত! সপ্তাহের ছুটি? সে তো স্বপ্ন। বিশ্রামের কথা বলতে গেলেই কপালে জুটত লাথি-ঘুষি। টাকা চাইতে গেলেই তো আরও অবস্থা খারাপ হয়ে যেত, ঘোষণা করলেন দুই বছর শেষে একবারে দেওয়া হবে। শেষমেশ মারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় নেমে পড়েন মেলা। টানা দুইদিন রাস্তায় হেঁটে ভাঙাভাঙা ইংরেজিতে প্রশ্ন করে খুঁজে বের করেন ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূতকে। কিন্তু তিনিই বা কি করবেন? পাসপোর্ট ছাড়া মেলাকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। বলাই বাহুল্য, গৃহকর্মী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পর তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করানো যায়! অন্তত দুবাইয়ে এটাই নিয়ম। পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে তাকে আটকে রেখে সারাজীবনের জন্য নরকজীবন ভোগ করানোর ইচ্ছা থাকলে সেটাও করানো অসম্ভব কিছু নয়। মেলার মতো হাজারো নারীদের মুখ থেকে তাই একটা কথাই বের হয়, “আমি আমার দেশকে হারিয়েছি, আমার মেয়েকে হারিয়েছি, হারিয়েছি সবকিছুই!”
অপরদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের ধনকুবেরদের জন্য দুবাই আসলেই একটি স্বর্গ। তাদের ভাষ্যমতে, “দুবাইয়ের সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো দাস ব্যবস্থা! নিজেকে কিছুই করতে হবে না, তারাই সবকিছু করবে!”
“আমি যদি ধরা পড়ি, তারা আমাকে ধরে নিয়ে জেলে পুরে দিবে” – পালিয়ে যাওয়া এক গৃহকর্মী
তথ্য ও ছবিসূত্রঃ
১) dailymail.co.uk/news/article-2859734/The-Dubai-DON-T-want-tourists-Photos-desperate-conditions-endured-migrant-labourers-forced-work-50C-heat-pittance.html
২) independent.co.uk/voices/commentators/johann-hari/the-dark-side-of-dubai-1664368.html
৩) https://en.wikipedia.org/wiki/Dubai