বহুল আলোচিত

হারিয়ে যাওয়া যত প্রাণী

এই পৃথিবী এক রহস্যময়। রহস্য তার চারদিকে থাকা প্রাণীজগৎ নিয়েও। এ পৃথিবীতে থাকা নানা প্রজাতির প্রাণীর অধিকাংশই আমাদের অচেনা। অনেক প্রজাতিই ...

Tuesday, April 25, 2017

ক্রপ সার্কেল, হোক্সার, এলিয়েন এবং আরও কিছু কথা

ধরুন আপনার বিশাল যব ক্ষেত আছে। আপনি সেখানে যব চাষ করেছেন। হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার সেই যব ক্ষেতের মাঝে কে যেন রাতারাতি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বিশাল এক নকশা এঁকে রেখে গেছে! আপনি তৎক্ষণাৎ কি ভাববেন? ফসলের ক্ষতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন, নাকি কাজটা কে করেছে তাই ভাববেন? আর যদি তখন আপনি দেখেন কাজটা চমৎকার জ্যামিতিক আকৃতিতে করা যা অন্তত এক রাতে করে ফেলার মতো কাজ আপনার কাছে মনেই হচ্ছে না, তখন আপনার ভাবনায় একটা নাম উকি দিতে বাধ্য, আর তা হচ্ছে এলিয়েন!
ক্রপ সার্কেল আসলে কঈ? কারা বানায় ক্রপ সার্কেল? বানানোর উদ্দেশ্যই বা কি? আসলেই কি এলিয়েনরা ক্রপ সার্কেলের মাধ্যমে আমাদের কোনো সিগন্যাল দিতে চাইছে? এসব প্রশ্নের উত্তর যদিও অনেকেই দিতে চাইবেন ক্রপ সার্কেলকে মানবসৃষ্ট ধাঁধা হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে, কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা ক্রপ সার্কেলের সাথে সম্পর্কিত আছে এমন কিছু বিস্ময়কর ব্যাপার যা সত্যিই মানুষকে ভাবায়। আর এই ভাবনাই ক্রপ সার্কেল সম্বন্ধে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীদেরকে কয়েক দশক ধরে বিভক্ত করে রেখেছে।
কেউ বলছেন এগুলো মানুষের সৃষ্টি, তো কেউ বলছেন এগুলো আসলে এলিয়েনদের সৃষ্টি। স্বীকারোক্তিও রয়েছে অনেকের। যারা তৈরী করে তাদের বলা হয় ক্রপ সার্কেল হোক্সার। ইংরেজি শব্দ হোক্সার অর্থ যে ব্যক্তি ধাঁধাঁ তৈরী করে বা ধাপ্পাবাজি করে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ক্রপ সার্কেল রহস্য আসলেই পুরোপুরি সমাধান হয়নি আজও। এখনও রয়েছে কিছু জিনিস অজানা।
ক্রপ সার্কেল হচ্ছে বিস্তৃত শস্যক্ষেতে শস্য নুইয়ে সমতল করে তার মধ্যে অদ্ভুত প্রকৃতির নকশা ফুটিয়ে তোলা। ১৬৭৮ সালে সর্বপ্রথম একটি ব্রিটিশ পত্রিকায় ‘মোয়িং ডেভিল’ নামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অনেকে এটিকেই পৃথিবীর প্রথম ক্রপ সার্কেল বলে অভিহিত করেন। কিন্তু কেউ কেউ সেটিকে ক্রপ সার্কেল বলতে নারাজ। কেননা সেখানে দেখা গিয়েছিল শস্য সমতল করে নয়, বরং কেটে একটি আকৃতি তৈরী হয়েছিল।
১৬৭৮ সালে মোয়িং ডেভিল শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ; 
আধুনিক সময়ে ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ক্রপ সার্কেল দেখা যায়। তবে ক্রপ সার্কেলের খবর পুনঃপুনঃ আসতে শুরু করে ৮০’র দশক থেকে। কোনো এক এন্ড্রু কলিন নামক ব্যক্তি এই অদ্ভুত কর্মকান্ডের সাথে প্রথম ‘ক্রপ সার্কেল’ নামটির পরিচয় করান। ততদিনে ক্রপ সার্কেল একটি বিশ্বব্যাপী রহস্যে পরিণত হয়েছে। তবে ডুওগ বাওয়ার এবং ডেভ কোরলি, ইংল্যান্ডের দুজন কৌতুকাভিনেতা ১৯৯১ সালে স্বীকার করেন যে, সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে তারাই ক্রপ সার্কেল বানিয়েছেন এবং তারা তা প্রমাণ করতে সকলের সামনে একটি ক্রপ সার্কেল বানিয়েও দেখান। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তারা দুজন মিলে প্রায় ২০০ এর অধিক ক্রপ সার্কেল তৈরী করেন। এই দুই হোক্সার এর স্বীকারোক্তির পর অনেকেই ক্রপ সার্কেল রহস্যের ইতি টানতে চেয়েছেন এই বলে যে, ইংল্যান্ডের বাইরে যেসব সার্কেল হচ্ছে সেগুলোও মানুষের সৃষ্টি। কিন্তু রহস্য আবার ঘনীভূত হয় যখন একদল গবেষক একটি ক্রপ সার্কেল এর উপর পরীক্ষা চালিয়ে বলেছিল- “এটা মানুষের তৈরী হতে পারে না”।
সেই থেকে ক্রপ সার্কেল মানুষের নিকট একটি রহস্য হয়ে আছে। মানুষের দ্বারা কিংবা ঝড়ে কিংবা প্রাকৃতিকভাবে একাধিক ধাপে বিবর্তিত হয়ে ক্রপ সার্কেলের সৃষ্টি, এরকম আরও নানান তত্ত্ব দিচ্ছেন নানা জন। কিন্তু কোনোটিই আদতে ক্রপ সার্কেলের রহস্য ভেদ করতে পারেনি। তবে ভেদ না হবার পেছনে আছে কিছু মুখরোচক কারণও। চলুন তাহলে জেনে নিই ক্রপ সার্কেলের ব্যাপারে দশটি অবিশ্বাস্য তথ্য।

১০) রোজওয়েল পাথর এবং চিজেলডন ক্রপ সার্কেল

রোজওয়েল পাথর;
২০০৪ সালের কথা। রবার্ট রিজ হাঁটছেন মরুভূমিতে। হঠাৎ করে তার নজরে আসে একটি অদ্ভুত পাথর। কালো রঙের পাথরটির ওপর নিখুঁত রহস্যময় এক সঙ্কেত খোদাই করা ছিল। তাছাড়া পরীক্ষা করে দেখা যায় যে পাথরটি মোটামুটি পুরনো এবং মরুভূমিতে এর প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হওয়া অন্তত সম্ভব না।
রিজ এর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান প্রায় আট বছর আগে ইংল্যান্ডে চিজেলডন নামে একটি গ্রামে একটি ক্রপ সার্কেল পাওয়া যায় যেটির নকশা অবিকল রোজওয়েল পাথরটির মতোই। নিশ্চিত হবার জন্য রিজ আধুনিক কম্পিউটার সফটওয়্যার এর সাহায্যে পাথরের ওপরের নকশাটিকে চিজেলডন ক্রপ সার্কেল এর ছবির ওপর বসান। অবিশ্বাস্যভাবে দুটোর আকৃতি সম্পূর্ণ মিলে যায়!

৯) শস্য বাঁকানো নাকি ভাঙা!

আদর্শ ক্রপ সার্কেলের নোয়ানো ফসল; 
একদিকে আপনি জানেন ক্রপ সার্কেল মানুষও তৈরী করতে পারে, অন্যদিকে আপনি এটাও জানেন যে সকল ক্রপ সার্কেল মানুষের তৈরী কিনা তা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তাহলে আপনি কি করে বুঝবেন কোনটি আসল আর কোনটি হোক্সারদের সৃষ্ট ধাঁধাঁ? ক্রপ সার্কেল গবেষকদের কাছে আপনি খুঁজে পাবেন এর উত্তর। যে সব ক্রপ সার্কেল এর শস্যগুলো ভাঙা কিংবা দুমড়ে মুচড়ে যায়, আপনি সহজেই ধরে নিবেন সেগুলো হচ্ছে হোক্সারদের সৃষ্ট ধাঁধাঁ বা পাজল। খাঁটি ক্রপ সার্কেল সেগুলোই যেগুলোর শস্যগুলো ভাঙা থাকে না। বরং এমনভাবে নোয়ানো থাকে যে তাদের কোনো ক্ষতিই হয় না। অনেকেই এই তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে ততটাও অগ্রহণযোগ্য নয় তত্ত্বটি।

৮) ক্রপ সার্কেলে পোকামাকড় মারা যায়!

ক্রপ সার্কেলে পাওয়া কিছু মৃত মাছি; 
গবেষকরা বেশ কিছু বড় ক্রপ সার্কেলে মৃত ছোট ছোট প্রাণী ও পোকামাকড় খুঁজে পেয়েছেন। ক্রপ সার্কেলে পোকামাকড় কেন মারা যায় এ ব্যাপারে চলছে গবেষণাও। আশ্চর্য ব্যাপার হলো ক্রপ সার্কেলের নোয়ানো ফসলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে কিছু মাছি তখনও শস্যের ওপর বসে আছে। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে এমন মনে হবে যে মাছিগুলো যেভাবে শস্যের ওপর বসেছিল ঠিক সেভাবেই তারা জমে বরফ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি যে ঘটনাটি রহস্যের সৃষ্টি করে তা হচ্ছে, ২০১৩ সালে একটি শস্যক্ষেতে ১০০ এর অধিক মৃত এল্ক (এক প্রজাতির হরিণ) পাওয়া যায় যেখানে একটি ক্রপ সার্কেলও পাওয়া গিয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, এল্কগুলো কোনো রোগ বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মরেনি। তাহলে কিভাবে মরেছিল এত ব্যাপক সংখ্যক এল্ক? তা আজও রহস্যই হয়ে আছে।

৭) জটিল গাণিতিক সমীকরণ

ক্রপ সার্কেলের সাথে গাণিতিক সম্পর্ক;
ক্রপ সার্কেলগুলো কেবলই কিছু নকশা বা ছবি নয়। গভীর পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা থেকে দেখা গেছে এদের মধ্যে লুকিয়ে আছে জটিল গাণিতিক সমীকরণ। এমনকি কেউ কেউ দাবি করেছেন ক্রপ সার্কেলে লুকায়িত কোডও রয়েছে!
২০১০ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে আবিষ্কৃত একটি ক্রপ সার্কেলের গবেষকরা ‘ইউলারস আইডেনটিটি’ নামক একটি গাণিতিক সমীকরণ খুঁজে পায় যাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সমীকরণ। এর দু’বছর আগেই উইল্টশায়ারের নিকটেই অবস্থিত ‘বারবারি ক্যাসেল’ নামক স্থানে আরও একটি ক্রপ সার্কেল আবিষ্কৃত হয়েছিল। একজন আমেরিকান এস্ট্রোফিজিসিস্ট দাবি করেছিলেন যে, ক্রপ সার্কেলটির মধ্যে গাণিতিক ধ্রুবক ‘পাই’ এর মানের প্রথম দশটি অঙ্ক চিত্রিত আছে।

৬) বিকিরণ ব্যত্যয়

ক্রপ সার্কেল থেকে রশ্নি বিকিরণ; 
যেকোনো ক্রপ সার্কেলের ব্যাপারে গবেষকরা সর্বপ্রথম যে জিনিসটি পরীক্ষা করেন তা হচ্ছে সেখানকার মটি থেকে কোনো ধরণের বিকিরণ হচ্ছে কিনা। পরমাণু বিজ্ঞানী মাইকেল কোরোস্ট এবং মারশাল ডাডলি ১৯৯১ সালে প্রথম ক্রপ সার্কেলের স্থানে রেডিয়েশন পরীক্ষা চালান। এর ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। তারা দেখতে পান যে ক্রপ সার্কেলের মাটিতে বিকিরণ এর মাত্রা এর আশেপাশের মাটির স্বভাবিক মাত্রার তুলনায় তিনগুণ।

৫) ক্রপ সার্কেল তারকা মানবদের তৈরী!

স্থানীয় আমেরিকানদের কল্পিত তারকা মানব;
স্থানীয় আমেরিকানদের কল্পিত তারকামানব সম্পর্কিত গল্পগুলোই সম্ভবত ক্রপ সার্কেলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে মুখরোচক গল্প যা এর সাথে এলিয়েনদের সংযোগ সহজেই ঘটায়। স্থানীয় আমেরিকান অধিবাসীদের বিশ্বাস তারকামানব বা ‘স্টার পিপল’ যারা কিনা আকাশ থেকে নেমে এসে শস্যক্ষেতে এসব আকৃতি তৈরী করে রেখে যায়। ক্রপ সার্কেলকে তারা পবিত্র চিহ্ন জ্ঞান করে এবং বিশ্বাস করে এর দ্বারা তারার দেশের মানুষেরা পৃথিবীর মানুষের নিকট সঙ্কেত পাঠায়।

৪) স্টোনহেঞ্জ ক্রপ সার্কেল

স্টোনহেঞ্জের পাশের ক্রপ সার্কেল; 
১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালে কথিত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। কিছু মোটর বাইকার এবং স্টোনহেঞ্জ দেখতে যাওয়া কিছু দর্শনার্থী দাবি করেন যে তাদের চোখের সামনে একটি ক্রপ সার্কেল আবির্ভূত হয়েছে! ‘জুলিয়া সেট’ ফরমেশনের ক্রপ সার্কেলটির ওপর গবেষণা করে জানা যায় যে ক্রপ সার্কেলটিগঠিত হতে মাত্র এক ঘন্টার মতো সময় লেগেছিল! ফলে যারা দাবি করেছেন তাদের চোখের সামনে গঠিত হয়েছিল ক্রপ সার্কেলটি তাদের কথা অবিশ্বাসও করা যায় না। কেননা পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তারা যে সময়ের উল্লেখ করেছেন সে সময়েই সার্কেলটি তৈরী হয়েছিল। একটি স্থানীয় বিমানের পাইলটের কাছেও এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। পাইলটের দাবি অনু্যায়ী তিনি সেই মাঠের উপর দিয়ে সেদিন ৫.৩০ মিনিটেও যখন উড়ে যাচ্ছিলেন তখন কিছু দেখেননি। কিন্তু ৬.১৫ মিনিটে তিনি যখন ফিরছিলেন তখন তিনি মাঠে ক্রপ সার্কেলটি দেখতে পান। তবে ঘটনাটি নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্পও পরবর্তীতে অনেককে বলতে শোনা যায়। যেমন একজন দাবি করেন তিনি স্থানটির ওপর ঘূর্ণায়মান সাদা ধোঁয়ার মতো মেঘ দেখতে পান!

৩) চিবলটনের ঘটনা

চিবলটন মানমন্দিরের পাশের মাঠে দুটি ক্রপ সার্কেল; ছ
ক্রপ সার্কেলগুলোর মধ্যে অন্যতম রহস্যময় দুটি ক্রপ সার্কেলের দেখা মেলে ২০০১ সালে চিবলটন অবজারভেটরির পাশের মাঠে। বিস্ময়করভাবে একটি সার্কেলের মধ্যে মানুষের অবয়ব ফুটে ওঠে। তবে অন্যটি ছিল আরও আশ্চর্যজনক। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে কার্ল সেগানের নেতৃত্বে একদল জোতির্বিজ্ঞানী কর্তৃক পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বে প্রেরিত বাইনারি রেডিও সিগন্যাল ‘অ্যারেসিবো মেসেজ’ এর প্রতিরূপ বা রেপ্লিকা দেখতে পাওয়া যায়। বিস্ময় সকল সীমা ছাড়িয়ে যায় যখন পরীক্ষায় দেখা গেল যে রেপ্লিকাটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ১৯৭৪ সালের সেই অ্যারেসিবো মেসেজের মতো নয়। সংকেতগুলোর পাঠোদ্ধার করে জানা যায় যে, সেগুলো বরং অ্যারেসিবো মেসেজের প্রতিউত্তর! মূল অ্যারেসিবো মেসেজে ছিল মানুষের জিনগত তথ্য এবং সৌরজগত সম্বন্ধীয় কিছু তথ্য যা কোড আকারে ছিল।
জোতির্বিদরা এই আশায় কোড প্রেরণ করেছিলেন যে আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ আলোকবর্ষ দূরে কোনো এক এম-১৩ নামক তারকাগুচ্ছে সেটি পৌছুবে এবং সেখানে কোনো এলিয়েন থাকলে তারা এর পাঠোদ্ধার করে প্রতিউত্তর পাঠাবে। চমকপ্রদ এই ক্রপ সার্কেলটিতে সেই উত্তরই পাওয়া যায়! সত্য না মিথ্যা তা প্রমাণসাপেক্ষ তবে ক্রপ সার্কেলটিতে পাওয়া কোড বিশ্লেষণ করে মোট ২৯টি প্রতিউত্তর পাওয়া গেছে যার মধ্যে মানুষ নয় বরং অন্য কোনো প্রাণীর জেনেটিক কোড এবং অচেনা এক সৌরজগতের তথ্য পাওয়া যায়!

২) ছায়াপথ

ছায়াপথ সদৃশ ক্রপ সার্কেল;
২০১২ সালে ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে দেখা যায় এযাবতকালের সবচেয়ে বড় ক্রপ সার্কেল যার আকৃতিগত বৈচিত্রতার কারণে নাম দেয়া হয়েছে ‘গ্যালাক্সি’ বা ছায়াপথ। প্রায় ৫০০ মিটার বিস্তৃত মাঠজুড়ে সার্কেলটির অবস্থান যার মধ্যে আছে ৫০০টি নির্ভুল বৃত্ত। কিছু কিছু বৃত্তের ব্যাস ২০ মিটারেরও অধিক ছিল। অনেক ক্রপ সার্কেল হোক্সারই বলেছেন এটি কোনো হোক্সারের কাজ হতে পারে না। ক্রপ সার্কেল বিশেষজ্ঞ ক্যারেন ডগলাস বলেছেন যে, এর আকার এবং জটিল গঠন একে ভিন্নতা প্রদান করে।

১) অদ্ভুত আলোর গোলক

ক্রপ সার্কেল গঠনে কথিত আলোর গোলক; 
ক্রপ সার্কেল কিভাবে গঠিত হয় তা নিয়ে আছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। তবে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি শোনা যায় তা হচ্ছে অদ্ভুত আলোর গোলক তত্ত্ব। অনেকেই দাবি করেন তারা ক্রপ সার্কেলের গঠন প্রক্রিয়া দেখেছেন। কথিত বর্ণনা অনু্যায়ী ছোট ছোট আলোর গোলক মাটির ১/২ মিটার উপরে ভাসতে থাকে এবং খুব দ্রুত ঘুরতে থাকে। এরকম কিছু ভিডিও ও ইউটিউবে অনেকে শেয়ার করেছেন। তবে ঘটনার সত্যতা কতটুকু তা জানা যায় নি।
তথ্যসূত্র
১) en.wikipedia.org/wiki/Crop_circle
২) nationalgeographic.com/videos/crop-circle-mystery/
৩) world-mysteries.com/science-mysteries/strange-phenomena/crop-circles/

Monday, April 24, 2017

যে অনুপ্রেরণায় তারা পৌঁছেছেন সফলতার দ্বারপ্রান্তে

সাফল্যের একদম চূড়ায় তাদের বসবাস। অর্থবিত্তের অভাব তো নেই-ই, অভাব নেই যশেরও। পূর্ব থেকে পশ্চিমে গোটা দুনিয়ার সব প্রান্তের সব মানুষই এক নামে চেনে তাদের। প্রতিদিনই লাখো মানুষ নিজেদের জীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে, আইডল হিসেবে অনুসরণ করছেন এই মানুষদের। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এই মানুষগুলোর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে কোন কোন বিষয়?
ক্ষমতা, অর্থ আর খ্যাতি সবই যখন হাতের মুঠোয়, তখন কিসের তাড়ায় তারা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, ঘাম ঝরান আর চেষ্টা চালিয়ে যান? হ্যাঁ, আর দশজন মানুষ হয়তো জীবনভর ক্ষমতা, টাকা-পয়সা এবং খ্যাতির মোহ কাটিয়ে উঠতে পারেন না। সেই লক্ষ্যেই তারা সাজান জীবনের ছক। সেই ছকে এক-দু’বার ব্যর্থ হয়ে তারা হাত গুটিয়ে বসেন, ফিরে যান চিরচেনা জীবনে। কিন্তু সবচেয়ে সফল মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করে পাওয়া যায় একেবারে ভিন্ন চিত্র। ক্ষমতা, অর্থ আর খ্যাতি যাদের হাতে এসেছে, তারা সেখানেই থেমে থাকেননি; জীবনের অর্থ এবং সার্থকতা খুঁজেছেন আরো গভীরে।

মাইকেল জর্ডান: ব্যর্থতাই যার অনুপ্রেরণা


মাইকেল জর্ডানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হয়। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, ব্যর্থতাকেই অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ধরেই এত দূর আসতে পেরেছেন তিনি। জর্ডানের ভাষায়, “ব্যর্থতার মুখোমুখি হওয়ার পর, সেটা আমাকে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে।
জর্ডান যখন হাই স্কুলের ছাত্র, তখন ছাত্রদের নিয়ে করা এক বাস্কেটবল টিমে তার জায়গা হয়নি। বিষয়টি যখন তার চোখে পড়ে, সেটাকে ভালোভাবে নেননি তিনি। বাড়ি ফিরে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকেন, হতাশায় অশ্রুসিক্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লেন, তার মনে নেই। জর্ডান চাইলে তখনই নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে তিনি কোমর বেধে কাজে লেগে পড়লেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস্কেটবল টিমে কাটাতে লাগলেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, তখন মনে মনে দেখতাম ঐ টিমে আমার নামও উঠেছে। এটাই আমাকে আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি দিতো। পরের বছর ঐ টিমে জর্ডানের জায়গা তো হলোই, প্রতিটা ম্যাচে অন্যদের চেয়ে গড়ে ২০ পয়েন্ট করে বেশি পেলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ইয়ারে গিয়ে দেখা গেলো, তার গড় পয়েন্ট ‘ট্রিপল-ডাবল’ ছাড়িয়েছে। ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এনবিএ ম্যাচে, বাস্কেটবলে সেরা খেলোয়াড়ের শিরোপা জিতেছেন ছয়বারেরও বেশি।
জর্ডানের মুখের কথাই শোনা যাক,
‘ব্যর্থতা আমি মেনে নিতে পারি, কারণ সবাই কিছু না কিছুতে ব্যর্থ হয়ই। কিন্তু চেষ্টা না করে বসে থাকাটা আমি মানতে পারি না।’

অপরাহ উইনফ্রে: বাঁচার জন্যেই কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেই


সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়নি তাঁর। বর্ণবাদী পঞ্চাশের দশকে জন্ম নেয়া একজন কৃষ্ণাঙ্গ তিনি, পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ছিল খুব শোচনীয়। শৈশবেই নিপীড়নের শিকার হতে হয় তাঁকে। সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিস্থিতি মোটেও তার অনুকূলে ছিলো না। আর দশজন মানুষ এই প্রতিকূলতাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বসে থাকতে পারতেন, কিন্তু সে পথ মাড়াননি অপরাহ।
বিখ্যাত টিভি অনুষ্ঠান ল্যারি কিং শো-তে অতিথি হয়ে এসে একবার অপরাহ তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্য হিসেবে বলেন, “এই গোপন কথাটা আসলে আমি গত ২১ বছর ধরে আমার নিজের টিভি শো-তে বলে আসার চেষ্টা করছি। গোপন বার্তাটা হলো,
তোমার জীবন নিয়ে তুমি কি করবে, সেটার পুরো দায়ভার তোমার। তোমার চারপাশের পরিস্থিতিকে তুমি যেভাবে নিচ্ছো, সেটাই ঠিক করবে, তুমি সামনে এগিয়ে যাবে, না পিছিয়ে পড়বে।”
এই জীবনে বড় কিছু করতে পারবো, এমন বিশ্বাস মাথায় রেখে জীবনের দায়ভার নিজের হাতে তুলে নেয়াটাই ছিলো অপরাহর সাফল্যের চাবিকাঠি। এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পৃথিবীখ্যাত টিভি উপস্থাপিকা, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক যার আর্থিক মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জনহিতৈষী কাজে এ পর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন তিনি।

স্টিভ জবস: মৃত্যু থেকে অনুপ্রেরণা


অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিভাবান উদ্ভাবনশিল্পী স্টিভ জবস যে পৃথিবীতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এমন প্রভাবশালী একজন মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে তাঁকে যে বিষয়টি তাড়া করেছে, তা হলো মৃত্যুর মতো নিষ্ঠুর সত্য।আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক ভাষণে জবস বলেন, “আমি যে খুব দ্রুত মারা যাবো, এমন একটি বোধ আমাকে তাড়া করতো। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, যার মাধ্যমে জীবনের বড় বড় অর্জনগুলো করায়ত্ব করতে পেরেছি। মৃত্যুভয়ের সামনে বাকি সবকিছু, যেমন কাছের মানুষদের প্রত্যাশা, অপমান এবং ব্যর্থতার ভয়- সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, “গত ৩৩ বছর ধরে, প্রতিটা সকালে আমি আয়নার দিকে তাকিয়েছি এবং নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আজকের দিনটাই যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে আজ আমার যা যা করার কথা, সেটা কি আমি করবো? যদি উত্তরটা হতো ‘না’ বোধক, তাহলে আমি বুঝতে পারতাম, আজকের দিনের কাজের তালিকায় পরিবর্তন আনা দরকার।

ওয়াল্ট ডিজনি: কৌতুহল থেকেই সবকিছু


ওয়াল্ট ডিজনির জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথমদিক ব্যর্থতায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন কানসাস শহরে একটা কার্টুন সিরিজ আঁকতে শুরু করেন তিনি। এত খারাপভাবে ব্যর্থ হলেন যে, সহায়সম্বল হারিয়ে রীতিমতো দেউলিয়া হয়ে পড়লেন। কিন্তু পৃথিবীর বাসিন্দাদের প্রতি ভাগ্যদেবতা নেহাত প্রসন্ন ছিলেন। ওই ব্যর্থতার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি ডিজনি। থাকলে আজকের ডিজনির মনোরম অ্যানিমেশন আমরা পেতাম না।
ওয়াল্ট ডিজনি বলেন,
“কোনো কিছু করার স্বপ্নটা যদি দেখতে পারেন, তাহলে ধরে রাখুন আপনি সেটা করতে পারবেন।”
আমরা কৌতুহলী প্রাণী। আমাদের ভেতরে যে কৌতুহল, সেটার কারণেই আমরা সামনে এগিয়ে যাই, একের পর এক নতুন দরজা খুলতে থাকি, যেসব দরজা আমাদের নিয়ে যায় নতুন নতুন পথে। যদি স্বপ্নের পেছনে ছোটার সাহসটা থাকে, তাহলে স্বপ্ন সত্যি হবেই। কৌতুহলের শক্তি থেকেই ডিজনি মিকি মাউস, স্নো হোয়াইট-এর মতো আরো বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেন। ফ্লোরিডায় গড়ে তোলেন ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড নামের থিম পার্ক। ডিজনির ভাষায়, “আজ যেটা অসম্ভব, সেটা করতে পারাটাতেই আসল আনন্দ।”

টনি রবিনস: সাফল্যের জন্য চাই ক্ষুধা


আমেরিকার প্রথমসারির ব্যবসা কৌশলীদের মধ্যে একজন টনি রবিনস। অডিও-ভিডিও বার্তা এবং জীবন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বের নামা প্রান্তের অন্তত ৫ কোটি লোককে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, একজন মহান মানুষ এবং একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়। তার উত্তর ছিলো, “ক্ষুধাই দুজন মানুষের ভেতরে ফারাকটা গড়ে দেয়। …আপনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন তাঁরা জীবনভরই কোনো কিছু অর্জনের জন্য ক্ষুধার্ত থাকেন।” মানুষকে সাহায্য করতে পারাটাই রবিনসের ক্ষুধা। গত ৩৮ বছর ধরে মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে চলেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র
১/ en.wikipedia.org/wiki/Tony_Robbins
২/ en.wikipedia.org/wiki/Oprah_Winfrey
৩/ en.wikipedia.org/wiki/Michael_Jordan
৪/ en.wikipedia.org/wiki/Steve_Jobs
৫/ en.wikipedia.org/wiki/Walt_Disney

প্রাচীন গ্রিসে অদ্ভুতভাবে মৃত্যুবরণ করা বিখ্যাত ব্যক্তিরা

প্রাচীন গ্রিসের সভ্যতা নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তারা কেমন ছিল? তারা কিভাবে প্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে এতদূর এগিয়ে ছিল? তাদের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল? ঠিক একইভাবে একটা প্রশ্ন এসে যায়। তারা মারা যেত কিভাবে? ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে গ্রিক নায়করা মারা গিয়েছে কারও বর্শার আঘাতে কিংবা রথের পিছনে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে!
তবে গ্রিক সমাজ সবচেয়ে বেশি আলোড়িত ব্যক্তিরা হলেন দার্শনিক-কবি-লেখকরা। এদের মধ্যেই কেউ কেউ মারা গিয়েছিলেন অদ্ভুতভাবে যা সাধারণ মানুষের কল্পনাতেও আসবে না। সেরকম কিছু ঘটনা নিয়েই সাজানো আজকের লেখা।

অপমানিত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলে পড়া

হিপোনাক্স ছিলেন একজন কবি, অন্তত প্রাচীন গ্রিসের লোকজনরা তাই বলত, যার বেশ বড় একটি কারণ ছিল ভাষার অপ্রাচুর্য্যতা। একজন কবির কবিতায় আপনি আপনি কি খুঁজে পেতে পারেন? প্রকৃতির সৌন্দর্য, জীবনের আকাঙ্ক্ষা বা প্রেম-ভালোবাসার উপাখ্যানই তো পাবেন, তারচেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু হিপোনাক্সের কবিতাগুলো ঘেঁটে দেখলে নগ্নতা আর অশ্লীল বাক্য ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাওয়াও গোবরে পদ্মফুল খুঁজে পাওয়ার শামিল।
যা-ই হোক, এই হিপোনাক্সকে ইতিহাসের অন্যতম কুৎসিত চেহারার অধিকারী বলে মনে করা হয়। তাই তিনি তার ভালোবাসার মানুষটিকে প্রস্তাব পাঠানোর পর প্রত্যাখ্যাত হবেন এমনটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সবাই ভেবেছিল, হিপোনাক্স সাধারণদের মতোই অন্য কাউকে খুঁজে নেবে। কিন্তু হিপোনাক্স বেছে নিলেন অন্য পথ। তার কুরুচিশীল কবিতাগুলোর শিকার হলেন তার বাবা বুপালাস! হিপোনাক্স তার খারাপ চেহারার জন্য দায়ী করলেন তার বাবাকেই। এই বিখ্যাত গ্রিক ভাস্কর তার ছেলের করা অপমানে শেষমেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।

নিজের কৌতুকে নিজেই হেসে মারা যাওয়া

প্রাচীন গ্রিসের সেরা দার্শনিকদের নামের তালিকায় ক্রিসিপাসের নামটা দেখা আশ্চর্যের কিছু নয়। দর্শনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা এবং নীতিশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করা এই বিদ্বান যদিও বাস্তব জীবনে খুবই অহংকারী ছিলেন, তা সত্ত্বেও ক্রিসিপাসের গুণ মোটেই কম না। ৭৩ বছরের জীবনে তিনি প্রায় ৭৫০ বই রচনা করেছেন, এর বেশিরভাগই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তার বেশ কয়েকটি বিখ্যাত লেখার একটিতে তিনি দেবী জুনোকে পতিতা হিসেবে দাবী করেছেন, যা গ্রিকদের মতে “বইটি পড়ার পর মুখ ঠিক রাখা অসম্ভব একটা ব্যাপার”!
ক্রিসিপাস একদিন পথ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাধাকে ডুমুর ফল খেতে দেখে ব্যাপক মজা পান এবং তার লোকজনদেরকে নির্দেশ দেন গাধাটিকে ওয়াইন দেওয়ার জন্য! এ কথা বলতে বলতেই তিনি মারা যান!

উপহারের ওজনে মারা যাওয়া

এথেন্স শহরের প্রথম হর্তাকর্তা বেশ কড়া শাসকই ছিলেন বলা যায়। তিনি মনে করতেন, গাজর চুরি করার জন্যেও মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ! এসব সত্ত্বেও এথেন্সবাসীরা ড্রাকোকে এতটাই পছন্দ করত যে, ড্রাকোকে শেষ পর্যন্ত নিজের জনপ্রিয়তার ওজনে চাপা পড়ে মারা যেতে হয়!
এইজিনার থিয়েটারে ড্রাকোর ভক্তরা তার জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ড্রাকো তার বক্তব্য দেওয়া শেষ করলে ভক্তরা তার দিকে নিজেদের জামাকাপড় খুলে তার দিকে ছুড়ে মারা শুরু করে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, প্রাচীন গ্রিসে অভিবাদন জানানোর রীতিটাও ছিল এরকম অদ্ভুতই। যা-ই হোক, ড্রাকোর ভক্তরা সেদিন একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। কয়েকশ ভক্তের ঘামে ভেজা কাপড়ের নিচে পড়ে শেষপর্যন্ত দমআটকে মারা যান প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত এই শাসক!

গোবরে মাখামাখি হয়ে কুকুরের কামড়ে মারা যাওয়া

অ্যারিস্টটল-প্লেটোর ভাবাদর্শকে প্রভাবিত করা হেরাক্লিটাস ছিলেন সক্রেটিস যুগেরও আগের দার্শনিক। বর্তমান তুরস্ক এবং প্রাচীন পারস্যের অধীনে থাকা এফিসাস শহরে থেকেই “বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক” তার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই দার্শনিক বৃদ্ধ বয়সে শরীর ফোলা রোগে আক্রান্ত হন। তার শরীরে পানি জমতে শুরু করে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোনোরকম উপকার না পাওয়ায় তিনি অদ্ভুত এক উপায়ের দ্বারস্থ হন। তার মনে হয়েছিল, “গোবরে শুয়ে থাকলে গোবর তার শরীরের পানি শুষে নেবে”!
এই চিন্তাভাবনা থেকেই তিনি একদিন সকালে গোবরে মাখামাখি হয়ে শুয়ে পড়লেন। সন্ধ্যার দিকে উঠতে চেষ্টা করলেও গোবর শক্ত হয়ে লেপ্টে যাওয়ায় তিনি ওখানেই আটকে থাকলেন। শেষমেশ গভীর রাতে জ্যান্ত অবস্থাতেই হিংস্র কুকুরের পেটে চলে যান এই দার্শনিক।

বই লেখার সময়ে মারা যাওয়া

“দ্য হিস্টোরি অফ পেলোপোনেশিয়ান ওয়্যার”- বইয়ের লেখক থুসিডাইডস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের আরেকজন বিখ্যাত দার্শনিক। প্রাচীন গ্রিসের অল্প কিছু ইতিহাস রচয়িতাদের মধ্যে থুসিডাইডসই ছিলেন এমন ব্যক্তি যারা ইতিহাসের মধ্যে গালগল্প এবং রুপকথা ঢুকিয়ে দেননি, এজন্য বর্তমানে তার লেখা ইতিহাসের বইগুলোই একেবারে প্রথম সারিতে রাখা হয়।
থুসিডাইডস ছিলেন স্পার্টা এবং অ্যাথেন্সের মধ্যে সংঘটিত পেলোপোনেশিয়ান যুদ্ধের একজন সেনাপতি। কিন্তু তিনি তার শহর “আম্ফিপোলিস” রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকাকালীন সময়ে তিনি তার বই লেখার কাজ চালিয়ে যান। তারপর হঠাৎ করেই গ্রিস থেকে নির্দেশ আসে তার দন্ড উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। একেবারে সঠিক কারণ জানা না গেলেও গ্রিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর পথিমধ্যেই কেউ একজন তাকে খুন করে। ছুরি দিয়ে করা আঘাতের সময় তিনি বই লেখায় ব্যস্ত ছিলেন এবং তার বাক্য তখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি!

ভুল ঠিক করতে গিয়ে না খেয়ে মারা যাওয়া

ফিলিটাস ভুল সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন, কথাটা একেবারে হাড়ে হাড়ে সত্যি। এই আধুনিক যুগে যদি ফিলিটাস জন্মগ্রহণ করতেন, তাহলে ইন্টারনেটের রাজা হতে যে তার বেশি সময় লাগত না তা বলাই বাহুল্য।
লেখক এবং একইসাথে কবি এরকম কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাচীন গ্রিসে সর্বপ্রথম উদয় হয়েছিলেন ফিলিটাস। তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো “ডিজঅর্ডারলি ওয়ার্ডস”, যে বইতে খুবই বিরল কিছু সাহিত্যের শব্দের উল্লেখ রয়েছে যেগুলো পড়ে হোমার তার লেখায় ব্যবহার করেছিলেন। ফিলিটাস তার সময় পার করতেন আরেকজন মানুষের ভুল ধরে! যখনই কেউ তার সামনে কোনো ভুল শব্দ উচ্চারণ করত কিংবা অযৌক্তিক কথা বলত, তিনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে তার ভুল ধরিয়ে দিতেন। কোন শব্দটি ব্যবহার করলে তার বাক্যটি আরও যৌক্তিক এবং আরও সুন্দর হত তা নিয়েই সারাদিন গবেষণা করতেন।
তিনি আরেকজনের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এতটাই উদগ্রীব ছিলেন যে, নিজের খাওয়ার কথাটাই মনে রাখতে পারতেন না! তিনি এতটাই রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন যে, রোমান কবি এলিয়ান তার লেখায় উল্লেখ করেছিলেন যে ফিলিটাস তার জুতার নিচে সীসার পাট বসিয়ে রাখতেন যেন বাতাসের তোড়ে উড়ে না যান! শেষমেশ তিনি মারাই যান ভুল শব্দ নির্বাচনের প্রতিকার নিয়ে চিন্তা করতে করতে! ফিলিটাসের এই কান্ড কিংবদন্তীর রূপ নেয়। অবশেষে তার কবরের ফলকে লিখে রাখা হয়, “আগন্তুক, আমি সেই ফিলিটাস। মিথ্যা শব্দগুলো আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে”!

অলিম্পিক জেতা প্রথম মৃত ব্যক্তি

প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিক গেমসে প্যানক্রেশন ছিল অন্যতম আকর্ষণীয় ইভেন্ট। এটি অনেকটা আধুনিক রেসলিং-এর মতো, খালি হাতে মারামারি করা এবং আরেকজন ট্যাপ আউট করা না পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়া। বেশিরভাগ সময়েই প্যানক্রাটিয়াস্টরা মারা যেত। আরিকিওন ছিলেন এমন একজন প্যানক্রাটিয়াস্ট এবং বোধহয় সবচেয়ে বিখ্যাত। অলিম্পিক গেমসে নিজের ক্যারিয়ারের একেবারে শুরু থেকেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ছিলেন আরিকিওন।
প্রতিবারের মতো সেবারও চ্যাম্পিয়নশিপ নিজের দখলে রাখতে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেকজন মুষ্টিযোদ্ধার। ম্যাচের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ আরিকিওনের পা বাঁকিয়ে চেপে ধরে কটিসন্ধির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আরিকিওন ব্যাথায় পরাজয় স্বীকার করতে যাওয়ার ঠিক আগেই পাশ থেকেই তার ওস্তাদ এরিক্সিয়াস তাকে চিৎকার করে উৎসাহ দিয়ে বলছিলেন, “কতটা গৌরবের ব্যাপার হবে যদি তোমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সবাই বলতে থাকে এই লোকটি অলিপিয়াতেও হাল ছেড়ে দেয় নি!” এই কথা শুনতেই আরিকিওন তার প্রতিপক্ষের গোড়ালি পা থেকে আলাদা করে ফেলেন! প্রতিপক্ষ ব্যাথায় আত্মসমর্পণ করার আগেই আরিকিওন দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নেয়।

ঈগলের মুখ থেকে ফেলে দেওয়া কচ্ছপের আঘাতে মারা যাওয়া

“ট্রাজেডি সাহিত্যের জনক” এইসকিলাসকে দেখে এক সাধু ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন “তুমি সাগরের ঝাপ্টায় মারা যাবে”! এই বাণীর কারণেই তিনি সবসময়ই কোনো নাটকীয় মৃত্যুর অপেক্ষা করতেন, হয়ত জলোচ্ছাসের আঘাতে ভাঙ্গা বাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরবেন এরকম কিছুই তার আশঙ্কা ছিল। তবে তার মৃত্যুর কারণটাও যে এর চেয়েও নাটকীয় ছিল তা কে জানত?
এইসকিলাস যখন সিসিলিতে অবস্থান করেছিলেন, তখন এক ঈগল মুখ থেকে কচ্ছপ ফেলে দেয়। এরকম ঈগলের অভ্যাস হলো মুখে কচ্ছপ নিয়ে কোনো পাথরের উপর ছুড়ে মারা যাতে কচ্ছপের খোলস ভেঙে যায়। এইসকিলাসের চকচকে টাক দেখে ঈগলটি ভেবেছিল হয়ত এটি কোনো পাথরই হবে! শেষমেশ কচ্ছপের খোলস ফাটার বদলে এইসকিলাসের মাথাটাই ফেটে একাকার হয়ে যায়!

অমর হওয়ার জন্য আগ্নেয়গিরিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যু

সিসিলির অন্তর্গত আক্রাগাস শহরে বাস করতেন বিখ্যাত দার্শনিক এম্পেডোক্লিস। হঠাৎ করেই আক্রাগাস শহরের এক বৃদ্ধা ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ল, কোনো চিকিৎসকই তাকে সুস্থ করে তুলতে পারছিল না। তো সেই বৃদ্ধা এম্পেডোক্লিসের শরণাপন্ন হলেন। এম্পেডোক্লিসও কিভাবে যেন সেই বৃদ্ধার রোগ সারিয়ে দিল। তারপর থেকে এই বিখ্যাত দার্শনিক মনে করতে থাকলেন তিনি নিশ্চয়ই কোনো দেবতা হবেন। এরপর তিনি শহরের সবাইকে জড়ো করে এক আগ্নেয়গিরির চূড়ায় উঠলেন। সেখান থেকেই ঘোষণা করলেন, “সবাই মাথা নিচু কর! আমিই তোমাদের অমর দেবতা!” কথাটা বলেই আগ্নেয়গিরিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এম্পেডোক্লিস এবং এভাবেই মারা যান!

তথ্যসূত্রঃ
১) en.wikipedia.org/wiki/Hipponax
২) en.wikipedia.org/wiki/Chrysippus
৩) en.wikipedia.org/wiki/Draco_(lawgiver)
৪) en.wikipedia.org/wiki/Thucydides
৫) en.wikipedia.org/wiki/Heraclitus
৬) en.wikipedia.org/wiki/Philitas_of_Cos
৭) en.wikipedia.org/wiki/Arrhichion
৮) en.wikipedia.org/wiki/Aeschylus
৯) en.wikipedia.org/wiki/Empedocles
১০) listverse.com/2017/02/07/10-incredibly-bizarre-ways-people-died-in-ancient-greece/

হামহাম জলপ্রপাত: ভ্রমণ যেখানে অ্যাডভেঞ্চারে পরিণত হয়

নৈসর্গিক হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কুরমা বনবিট এলাকায়। ২০১০ সালের শেষের দিকে একদল পর্যটক এই জলপ্রপাত আবিস্কারের দাবী করেন। কিন্তু স্থানীয়দের দাবী- এই জলপ্রপাতের অস্তিত্বের কথা তারা আগে থেকেই জানতেন। দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা এই জলপ্রপাতটির উচ্চতার নির্ভরযোগ্য সঠিক পরিমাপ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, এর উচ্চতা ১৩৫-১৬০ ফুটের মধ্যে, যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৬২ ফুট।
প্রমত্তা হামহাম;
হামহাম- শব্দটা একটু অপরিচিত মনে হওয়া স্বাভাবিক। কারণ দুটো: এক, এই জলপ্রপাত পরিচিতি পেয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। দুই, এই শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ ধারণা করেন ‘হাম্মাম’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি ,যার অর্থ গোসলখানা। আবার সিলেটি উপভাষায় ‘আ-ম আ-ম’ বলে পানির তীব্র শব্দকে বোঝানো হয়। তাই অনেকে ধারণা করেন এখান থেকেই ‘হামহাম’ নামের উৎপত্তি। এই জলপ্রপাতের আরেক নাম ‘চিতা ঝর্ণা’ হলেও হামহাম নামেই এটি অধিক পরিচিত।
ঝর্ণার যৌবন হলো বর্ষাকাল। তাই বর্ষাতেই এই অ্যাডভেঞ্চার সবথেকে বেশি থ্রিলিং। হামহাম জলপ্রপাতে সরাসরি গাড়ি নিয়ে পৌছানোর কোনো রাস্তা নেই। কয়েক কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা আপনাকে হেঁটে যেতে হবে। আর এই রাস্তা পাড়ি দেওয়ার জন্যই এই যাত্রা ভ্রমণের থেকে বেশিকিছু!

অ্যাডভেঞ্চারের প্রস্তুতি

মূল অ্যাডভেঞ্চার শুরু হবে কলাবনপাড়া থেকে। এটি মূলত কমলগঞ্জ উপজেলার শেষ গ্রাম। এর পাশেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এই গ্রাম পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। তারপর শুরু হবে পায়ে হাঁটা রাস্তা। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাই সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া ভাল। এতে পথ হারানোর সম্ভাবনাও থাকবে না এবং সাথে কোনো সাহায্য চাইলেও পাবেন। ঐ গ্রামের অনেকেই গাইড হিসাবে কাজ করে। আপনি জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাবেন। খরচ পড়বে ৩০০-৫০০ টাকার ভিতরে।
যাতায়াতে পাহাড়ের উপরে বেশ কয়েকবার ওঠা-নামা করতে হয়। পাহাড়ি রাস্তা বেশ পিচ্ছিল থাকে। সেক্ষেত্রে হান্টিং বুট ব্যবহার করা ভাল। তাছাড়া পাহাড়ি পথে হাঁটার সুবিধার্থে একটি করে বাঁশ নিতে পারেন। জোকের হাত থেকে রেহাই পেতে সাথে লবণ ও সরিষার তেল নিলে ভাল হয়। আর অবশ্যই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার নিয়ে নিতে হবে। কারণ ঐ রাস্তায় কোনো খাবারের দোকান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

পথের ঠিকানা

ঝর্নাটির কাছে যাওয়ার সুবিধার জন্য এখনো কোনো সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ঝর্নায় যেতে হলে কুরমা বনবিটের চাম্পারায় চা-বাগান হয়ে যেতে হয়। চাম্পারায় চা-বাগান থেকে কলাবনপাড়ার দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার।
এরকম জঙ্গলের মধ্য দিয়ে শুরু হবে অ্যাডভেঞ্চার; 
কলাবনপাড়া থেকে রাস্তা শুরু হবে চা-বাগানের মধ্য দিয়ে। বনের শুরুতেই দুটি রাস্তা পাওয়া যাবে। ডান দিকের রাস্তা দিয়েই যাওয়া সুবিধাজনক। রাস্তা দিয়ে ঢুকতেই জানা-অজানা অনেক ধরণের গাছ চোখে পড়বে। আর সাথে চোখে পড়বে নানান প্রজাতির বাঁশ। মাঝেমধ্যেই ছোট ছোট সাঁকো পার হতে হবে। যাবার পথে চোখে পরবে সারি সারি কলাগাছ, জারুল, চিকরাশি, কদম গাছ। ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা পেতে পারেন চশমাপড়া হনুমানের!
এই প্রবাহের উৎপত্তি হামহাম থেকে; 
রাস্তায় সবথেকে উঁচু এবং খাঁড়া যে পাহাড় তার নাম মোকাম টিলা। এটি অতিক্রম করা একটু কষ্টসাধ্য বটে! তবে মন খারাপ করতে হবে না। এর পাশের পাথুরে প্রাচীরগুলো দেখলে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য! এই মোকাম টিলার পাশেই আরেকটি ছোট ঝর্না আছে যা স্থানীয়ভাবে ‘সীতাব’ নামে পরিচিত। অপরূপ এই ঝর্ণাটি দেখতে ভুলবেন না।
বর্ষাকালে জোঁকের উপদ্রব বেশি হয়। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এই পাহাড়ি পথ একসময় আপনাকে স্বচ্ছ জলের স্রোতে নামিয়ে দিবে। এই স্বচ্ছ শীতল জলের স্রোত মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। স্বচ্ছ জলের নিচে তাকালেই চোখে পড়বে বিশাল বিশাল পাথর! এই জলের স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে হামহাম জলপ্রপাত থেকে। তাই এই স্রোতে নেমে পড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আপনি ঝর্ণার পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাবেন। অপূর্ব এই বনেই মধ্যে প্রমত্তা হামহামের পানির শব্দ এক অভূতপূর্ব অনুভূতি!
কিছুক্ষণ পরেই পাবেন পথের শেষ; 
চারিদিকের শীতল শান্ত পরিবেশের মধ্যে হামহামের জলধারা এক অদ্ভুত ছন্দের সৃষ্টি করে! এই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর পরিবেশে একবারও চোখ ফেরানোর চিন্তা আসে না। প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু থেকে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা এগিয়ে যাচ্ছে পাথর থেকে পাথরে! আর এই শীতল পানি স্পর্শ করার অনুভূতিও অসাধারণ।
পর্যটকদের অনেকেই জলপ্রপাতের উপরে ওঠার জন্য চিন্তা করেন। কিন্তু এটি খুবই বিপদজনক। কারণ এতে ওঠার কোনো রাস্তা নেই। এছাড়াও এই ঝর্না র আশেপাশের মাটি খুবই পিচ্ছিল। তাই এর উপরে উঠার চেষ্টা করা মানে জীবন বাজি রাখা! আরেকটি কথা, অবশ্যই সন্ধ্যা হওয়ার আগে কলাবনপাড়ায় ফিরতে হবে। সেজন্য ফেরার জন্য কমপক্ষে ৫ ঘন্টা সময় হাতে রাখতে হবে। সূর্যাস্তের পরে জঙ্গলে থাকা খুবই অনিরাপদ।

যা মনে রাখবেন

প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে রাখতে হবে। কারণ জঙ্গলে চলার পথে ছোটখাটো ব্যাথা পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া সাথে খাবার পরিবহনের জন্য পলিথিন বা প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি পরিবহণ করলে তা সাথে ফেরত নিয়ে আসবেন। এগুলো অপচনশীল দ্রব্য, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায়।

কিভাবে যাওয়া যায়

বাস, ট্রেন বা বিমান যেভাবেই যান না কেন, প্রথমে আপনাকে যেতে হবে শ্রীমঙ্গলে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ ও এনা পরিবহনের বাস সরাসরি শ্রীমঙ্গল যায়। ভাড়া পড়বে ৩৮০-৪০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা-সিলেট এর মধ্যে চলাচলকারী যেকোনো আন্তনগর ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হবে ১৭৫-৩৫০ টাকা। আর বিমানে যেতে চাইলে সরাসরি সিলেটে চলে যেতে হবে।তারপর সেখান থেকে শ্রীমঙ্গলে আসতে হবে।
শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়ী ভাড়া করে সরাসরি কলাবনপাড়া চলে যাওয়া যাবে। যে গাড়িতে যাবেন, সেটি অবশ্যই যাওয়া ও আসার জন্য ভাড়া করবেন। কারণ ঐ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। তাই শুধুমাত্র যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করলে আসার সময় যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সিএনজি নিয়ে গেলে ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকার মধ্যে হবে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কলাবনপাড়া যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগবে। অন্যদিকে কলাবনপাড়া থেকে হামহামে যেতে-আসতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। রাস্তা খারাপ হলে একটু বেশী লাগতে পারে। তাই শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সকাল সাড়ে ছয়টার ভেতরে রওয়ানা হওয়াই ভাল।

থাকার ব্যবস্থা

শ্রীমঙ্গল শহরের ভেতরে অনেক হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। মাঝারি থেকে উচ্চ মানের হোটেল বা গেস্ট হাউস সহজেই পেয়ে যাবেন। এছাড়া শহরের কাছেই রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল ‘গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ’। আপনার পছন্দমত থাকার জায়গা সুবিধামত বাছাই করে নিতে পারবেন। আরেকটা কথা, শ্রীমঙ্গল শহরটা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর! তাই সময় পেলে শহরটাও ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান খুব কাছাকাছি। চাইলে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন।
বাংলাদেশে জলপ্রপাতের সংখ্যা নেহাত কম নয়! নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ভ্রমণই নতুন আনন্দ দেবে। কিন্তু হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়া শুধুমাত্র ভ্রমণ হিসাবে বলা যাবে না। এই ভ্রমণ আপনাকে একটি দারুণ অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা দেবে! রোমাঞ্চপ্রেমী মানুষের জন্য এর থেকে আদর্শ স্থান বোধহয় আমাদের দেশে খুব কমই আছে! আর হামহামের সৌন্দর্য? এককথায়- ভয়ংকর সুন্দর!
তথ্যসূত্র
১) bn.wikipedia.org/wiki/হাম_হাম_জলপ্রপাত
২) moulvibazar.gov.bd/site/tourist_spot/38bcb826-0758-11e7-a6c5-286ed488c766/নয়নাভিরাম-হামহাম-জলপ্রপাত

Sunday, April 23, 2017

আপনার নেতিবাচকতাই আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে

জীবনটাকে কি খুব দুর্বিষহ মনে হচ্ছে?
মনে হচ্ছে, যেখানেই হাত দিচ্ছেন সেখানেই ব্যর্থতা?
মনে হচ্ছে, গোটা দুনিয়াই যেনো আপনাকে একের পর এক সমস্যায় ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে?
মনে হচ্ছে প্রতিটা পদক্ষেপেই কোথাও না কোথাও বড় ধরনের গড়বড় রয়ে যাচ্ছে ?
আপনার মন যদি এমনটা ইঙ্গিত দিতে থাকে, নিশ্চিত থাকুন আপনার জীবনে আসলেই কোথাও বড় ধরনের ‘গড়বড়’ রয়ে গেছে । আপনি নিশ্চয়ই এই গড়বড়ে জীবন কাটিয়ে উঠতে চান । হয়তো চেষ্টা করেছেনও, কিন্তু পারেননি। কী সেই শক্তি যে অক্টোপাসের মতো পেছনে টেনে রেখেছে আপনাকে?
আয়নায় তাকান, সেই অক্টোপাসকে দেখতে পাবেন।

যদি ভাবেন প্রতি পদক্ষেপেই এই পৃথিবীর মাটি আপনাকে উল্টে ফেলে দিতে চাইছে, তাহলে আপনি আসলে মাটিতে পা রাখতেই ভুল করছেন। চারপাশে শুধু অন্তহীন সমস্যা দেখতে পেলে, সেটা আপনার দেখার ভুলের কারণেই হচ্ছে। ইতিবাচক আর নেতিবাচক- এই দু’ ধরনের ‘মোড’-এ কাজ করার ক্ষমতা আপনার মহাশক্তিধর মস্তিষ্কের রয়েছে। আপনি শুধুমাত্র নেতিবাচককেই দেখে এসেছেন। অথবা শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে কিংবা কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে এসে নেতিবাচকতায় এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, ভুলেই গেছেন সবকিছুকে অন্যভাবেও দেখা যায়। কপালে বিরক্তির ভাঁজ না ফেলে, হাসিমুখে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বরণ করে নেয়া যায় সামনে থাকা সমস্যাটিকে।
সুপারহিরো ফিল্ম দেখেছেন? যেখানে ভালো আর খারাপের লড়াইতে দিন শেষে ‘ভালো’র মুখেই শেষ হাসি ফোটে? আপনার জীবনের সুপারহিরো আপনি, কিন্তু আপনার নেতিবাচকতা দিন শেষে আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে।

আপনি কাজটা ভালোবাসেন না, অথচ সারা জীবন অফিসের ডেস্কটায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে হবে এমনটাই ধরে নিয়েছেন। কিছু টাকার বিনিময়ে আপনার ভেতরকার অমূল্য জীবনীশক্তিটা শুষে নিয়ে কেউ একজন তার নিজের জীবনের স্বপ্ন সাজাচ্ছে। দোষটা কি তার?
না, দোষটা দিন শেষে আপনারই, কারণ আপনার হৃদয়ের একেবারে ভেতরকার ডাক শোনার মতো সাহসটাই আপনার নেই, সে ডাকে কান পেতে নিজ উদ্যমে নিজ জীবন সাজিয়ে নেয়ার সাহসটা আপনার ভেতর জন্মায় নি এখনো।
ছোট্ট একটা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন আপনি, যার এ মাথা থেকে ও মাথা মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায়। মাত্র একবারের জন্যেই আপনি এখানে জন্মেছেন। একটা মাত্র সুযোগ। অথচ ঘর-অফিসের চেনা পথের বাইরে পা বাড়ানোর সুযোগ আপনি নিজেকে দেননি। প্যারিসের ল্যুভরে আপনার মোনালিসা দেখা হয়নি। আমাজনের জঙ্গলে যেখানে কোনো মানুষের পা পড়েনি, সেখানে হয়ত প্রথমবারের মতো আপনিই পা রাখতে পারতেন। অথচ কোনো একদিন একটা প্লেনের টিকেট কেটে যদি উঠে পড়তেন স্বপ্ন পূরণে, তাহলে হয়ত অপূর্ণতার তালিকা এতো দীর্ঘ হতো না। জীবনকে উপভোগ করার, অর্থপূর্ণ করার এই পদক্ষেপ যদি আপনি নিয়েই ফেলতেন, তবে তাতে কতটা খারাপ পরিণতি হতে পারতো? আপনার এই অবাধ্যতায় পৃথিবী কি তার ঘোরা থামিয়ে দিয়ে মহাধ্বংসলীলা ডেকে আনতো? আপনার কি মৃত্যু হতো? আচ্ছা মরে গেলেই বা ক্ষতিটা কি হতো? আপনার একঘেঁয়ে জীবন তো আপনাকে কখনো প্রাণখুলে হাসতেই দেয়নি।
আসলে আপনি ছোট থেকেই শুনে এসেছেন, জীবটা কঠিন, অসংখ্য চ্যালেঞ্জে ভরপুর। আপনি সে ভয়ে এতো টিপে টিপে পা ফেলেছেন যে, কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হননি আপনি।

আপনার জীবনের এই গভীর অসুখের জন্য দায়ী জীবাণুটা আপনার নেতিবাচকতা। ঝুঁকি নিয়ে আপনার যে সীমাহীন ভয়, সেটাই আপনার জীবনীশক্তিটাকে পরজীবীর মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। আপনি আপনাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছেন প্রিয় মানুষগুলোর জন্য পরিশ্রম করে, খেটে খেটে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। অথচ আপনার নিজেকে একা বোধ করছেন, আপনার মনে হচ্ছে আপনার চারপাশের কোনো মানুষের সঙ্গেই আসলে আপনার ঘনিষ্ঠতা জন্মায়নি। মনে হচ্ছে, আপনি শুধু একতরফাভাবেই দিয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে কেউই কিছু দিচ্ছে না। আপনার কথা ভাবছেই না একদম।
আপনি যেনো অদৃশ্য হয়ে উঠছেন তাদের কাছে, দিন দিন আপনার সঙ্গে বাকি সবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে উঠছে। নেতিবাচকতায় নজর দিন। তাদের দিক থেকেও একটু গোটা বিষয়টা দেখার চেষ্টা করুন। লক্ষ্য করুন, আপনি যাদের জন্য খাটছেন, তাদের কাছ থেকে আপনি কি চাইছেন, ভয়মিশ্রিত ভক্তি নাকি নিখাদ প্রাণখোলা ভালোবাসা। শেষেরটির জন্য কাড়ি কাড়ি টাকার দরকার হয় না। নাহ, সিনেমার সংলাপ নয়, আসলেই দরকার হয় না। দরকার হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর নিজের সবলতা, দুর্বলতা এবং স্বপ্নগুলো তাদের সামনে মেলে ধরার ক্ষমতা।
আপনি ভাবছেন, “পড়াশোনা শেষ করে চাকরি, বিয়ে, সন্তান-সন্ততি এবং তারপর মৃত্যু”– এই অনুগত জীবনের চক্র ভাঙার সাধ্য কারো নেই। আপনার ধারণা ভুল। জীবনটাকে উপভোগ করতে আপনার সন্ন্যাসব্রত নিতে হবে, বা একা হয়ে যেতে হবে, এটা একেবারেই ঠিক নয়। আপনি যেভাবে সুখী হবেন, তাতে যদি আপনার কাছের মানুষটি নাখোশ হন, তবে প্রশ্ন করুন, তিনি আসলেই আপনার কতটা কাছের? আপনার জীবন অর্থহীন হয়ে গেলে, কাছের মানুষটার জীবন তো অর্থবহ হতে পারে না কোনোভাবেই। যদি আপনাকে দাস জীবনেই তিনি আঁটসাঁট করে বেঁধে রাখতে চান, তাহলে তিনি আপনার মনিব হতে পারেন বড়জোড়, ভালোবাসার মানুষ নন।

আসলে গোটা বিষয়টাই খুব পরিষ্কার। আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুটাই আপনি। আপনি বারবার বল ছুঁড়ে দিচ্ছেন আপনার জীবনের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে, ব্যর্থ হচ্ছেন। চোখ মেলে তাকালে দেখবেন, যে গোলকিপার বারবার আপনাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করছে, তার ভূমিকায়ও আপনিই দাঁড়িয়ে আছেন।
নিজের মনে কান পাতুন। শুনতে চেষ্টা করুন, আপনি কি চান? দিনের পর দিন নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে হয়ত শেষ জীবনে অনেক টাকার মালিক হবেন, কিন্তু তাতেই কি আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন? আপনি সামান্য কয়টি বছর হাতে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। অবাই যে পথে গেছে, অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে সে পথে গিয়েই কি ‘মানবজনম’ নিঃশেষ করবেন? এই সিদ্ধান্ত আপনার নিতে হবে এবং যদি সম্ভব হয়, নিতে হবে আজই।
নিজের স্বপ্নের কথা শুনুন। বোঝার চেষ্টা করুন, কোনো কাজ করার সময় আপনার মনেই হয় না যে আপনি আসলে কাজ করছেন। কোনো জিনিস শেখার সময় বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতে হয়না ছুটির ঘণ্টার অপেক্ষায়। যদি তা খুঁজে পান, তবে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান এবং জ্ঞানীদের মধ্যে একজন। আপনি আপনার নিজের প্রাণের স্পন্দন ধরতে পেরেছেন। সাফল্য আপনার নিশ্চিত, মাঝে কেবল কয়টা বছরের সংগ্রাম রয়েছে মাত্র। সেই সংগ্রামের সময় হয়ত অনেকে আপনাকে বিদ্রুপ করবে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে। আর আপনি সেসবে কান না দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে যাবেন স্বপ্ন পূরণের পথে, জীবনের সার্থকতার পথে। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষেরা হয়ত আপনার পাশে থাকবে, কিন্তু তারা বড়জোর আপনার জন্য শুভকামনা করতে পারেন। সাফল্যের পথে আসলে হাঁটতে হয় একাই।
জেনে রাখুন, পথ শেষে জীবনের সূর্য যখন অস্তাচলে হেলে পড়বে, তখন একজন সফল, সার্থক এবং সুখী মানুষ হিসেবেই আপনি চোখ বুজবেন।
তথ্যসূত্র
১/ tinybuddha.com/blog/your-job-doesnt-define-you/
২/ quora.com/Life-Is-life-too-short-for-a-9-to-5-job
৩/ thoughtcatalog.com/becca-martin/2016/12/hate-to-break-it-to-you-but-you-are-the-reason-your-life-sucks-so-much/